তুরস্কের
সাম্প্রতিক কবিতা
আর্যনীল
মুখোপাধ্যায়
যতদূর
স্মৃতি যায় ১৯৫০
দশকের শেষে, কলকাতার
পার্ক সার্কাসে
অনুষ্ঠিত মুক্তমেলায়
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
সাইক্লোস্টাইল
করা এক কাগজের
গুচ্ছে নিয়ে এসেছিলেন নাজিম হিকমত-এর কবিতা। তুর্কি থেকে কারো ইংরেজি অনুবাদ করা। সেখানে থেকেই বঙ্গানুবাদ করেন সুভাষ। পরে বই হিসেবে নাজিমের কবিতার বাংলায়
প্রকাশিত হয়। হয়তো, সেই প্রথম কোনো তুর্কি কবিতার বঙ্গানুবাদ। অবশ্য এটা মনে রাখা জরুরী তুর্কি ভাষার আয়ু বাংলার মতোই, অন্তত এগারোশো বছরের, যদিও সে ইতিহাস বিবর্তনময়। এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে জালালুদ্দিন রুমি তাঁর জীবনের একটা বড় অধ্যায় তুরস্কের কনিয়া শহরে কাটিয়েছেন। সেখানে কাব্যরচনা করেছেন। লিখেছেন হাফিজও। তবে সে কবিতা তুর্কি ভাষায় লেখা নয়, ফারসী ভাষায়, ফলে তাদের ‘তুর্কি’ আখ্যা দেওয়া যায়না। এখানেই বাংলা-তুর্কির কাব্য-সম্পর্ক স্থগিত ছিল বেশ কয়েক দশক।
বাংলা-তুরস্কের কবিতার পুনরায় যাতায়াত শুরু হয় ২০১০ সাল নাগাদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমার সাথে তুর্কি-মার্কিন কবি ও অনুবাদক মুরাত নেমেত-নেযাতের আলাপচারিতার মাধ্যমে। প্রকৃষ্ট কবি মুরাত লেখেন ইংরেজি ভাষায়। কিন্তু পাশাপাশি নিরন্তর ইংরেজিতে অনুবাদ করেন তুরস্কের কবিতা। ওঁর লেখা ‘এদা’
নাম্নী এক ইংরেজি অনুবাদ সংকলন আমি সংগ্রহ করি ও তাতে মনোনিবেশ করি বহু সময় ব্যেপে। টের পেতে থাকি তুর্কি কবিতার মায়াজাল যা নাজিমের কবিতার আশপাশ দিয়ে অনেকদূর বিস্তৃত। মুরাতের সাথে তাঁর চেয়ে অনুজতম তুর্কি কবিদের সম্পর্কও জোরালো। ফলে আমার সমসাময়িক ও তার চেয়েও তরুণতর তুর্কি কবিতার বৃত্তে প্রবেশ অনায়াস হয়ে পড়ে। তুমুলভাবে আকৃষ্ট হই আমার সমসাময়িক, অল্পপঠিত কবি সামি বায়দারের লেখার। তাঁকে চিঠি লিখি। উত্তর পাইনা। মুরাত জানান সামির ইংরেজি জোরালো নয়, তাছাড়া তিনি নানা মানসিক সমস্যাকীর্ণ। মুরাতের ইংরেজি অনুবাদ থেকে বঙ্গানুবাদ করি সামি বায়দারের বেশ কিছু কবিতা যা আমার প্রবন্ধ সংকলন ‘কবিতার অন্যকোনোখানে-খণ্ড ২’র (নাগরী, বাংলাদেশ, ২০১৭) অন্তর্গত। আরো পড়তে থাকি ওরহান ভেলি,
জামাল সুরেয়া, ইলহান বের্ক, এসে এয়হান, লালে মুলদুর, সেহান ইরোস্জেলিক, কুচুক ইস্কেন্দার প্রমুখের কবিতা। ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে সপরিবারের তুর্কিয়ে বেড়াতে গেলে মুরাতও সিঙ্গাপুর থেকে এসে আমাদের সাথে যোগদান করেন। এক অপরাহ্নে ইস্তানবুলে মার্মারা সাগরপারের কাছে এক রেস্তোরাঁয় মুরাত আলাপ করিয়ে দেন একাধিক তরুণতর তুর্কি কবি ও অনুবাদকদের সাথে। এঁরা ইংরেজিতে দক্ষ হবার ফলে আমাদের মাতৃভাষার অন্তরায় খুব একটা বাধা হয়নি।
২০২৪-এর গ্রীষ্ম। ইস্তানবুল
শহরের তাকশিম্ অঞ্চলে
মার্মারা পেরা
হোটেলের কাছে এক
রেস্তোরাঁর ছাদে
তুর্কি কবিদের
আড্ডা। বাঁদিক
থেকে এফে মুরাদ, আর্যনীল
মুখোপাধ্যায়,
মুরাত নেমেত
নেযাত, গঞ্জা
ওসমেন, নীল
ডহার্টি ও ওকচেনুর
চেলেবি।
এবারের
কৌরব অনলাইন ৬৫তে
সাম্প্রতিককালের
সাতজন তুর্কি কবির
কবিতা অমৌলিক বাংলা
অনুবাদে রাখা হলো। এ সময়ের
তুর্কি কবিতার
এই সংগ্রহ প্রতিনিধিত্বমূলক। অনুবাদকে
‘অমৌলিক’
বললাম তার কারণ
বিদেশী ভাষা (ইংরেজি ভিন্ন)
থেকে বাংলায়
প্রকাশিত প্রায়
সমস্ত সাহিত্যানুবাদই
মূল ভাষা থেকে
করা নয়, ইংরেজি
অনুবাদ থেকে করা। কোনো ‘অমৌলিক’
অনুবাদকে আন্তর্জাতিক
স্তরে বিশুদ্ধ
অনুবাদ বলে গণ্য
করা হয়না। কবি ও কবিতা
নির্বাচনের অনেকটাই
সম্ভব করেছেন গঞ্জা
ওসমেন। তাঁর প্রতি
আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি জুড়েছি সামি বায়দারের কিছু নতুন বাংলা অনুবাদ। সামি বায়দারের কবিতার অপূর্ব ইংরেজি অনুবাদ (মুরাত নেমেত-নেজাতের করা)
থেকে বঙ্গানুবাদ করেছিলাম কয়েক বছর আগেই। পরবর্তীতে একটি দ্বিতীয়াংশ প্রকাশের ইচ্ছে রইলো। বিশেষ করে কবি কুচুক ইস্কেন্দারের কবিতার বাংলা অনুবাদ।
আর্যনীল
গ্রীষ্ম, সিনসিন্যাটি, ২০২৫
||
|| || ||