ফিরে  দেখা  পরিবিষয়ী

আর্যনীল মুখোপাধ্যায়

আজ  থেকে ১৫ বছর পূর্বে ‘পরিবিষয়ী কবিতা’র চর্চা ও ভাবনা যখন কাদা থেকে মূর্তি হচ্ছে, সে দলের কবিদের মধ্যে নানা আলাপ, আলোচনা, তর্ক, আন্তর্ক্রিয়া ঘটছিলো পরিবিষয়ী কবিতাভাবনা গড়ে ওঠার নেপথ্যে দুটো বড় প্রবণতা কাজ করেছিলো এদের ‘প্রবণতা’ও যেমন বলা যায় তেমন ‘চরিত্র’ একটা ‘বিচ্ছিন্নতা’ অন্যটা ‘বিভিন্নতা’ সংঘের সাত কবি – সব্যসাচী সান্যাল, শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মেসবা আলম অর্ঘ্য, রাদ আহমদ, সুকান্ত ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমিএঁদের সাতজনের ছ-জনই তখন বিদেশে বসবাসকারী বা দীর্ঘবাসের পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন সপ্তমজন, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার কবি হলেও পাহাড়ে চিরমনপ্রবাসীমূল কলকাতা/ঢাকা বা দুই বাংলার শহর বা গ্রামাঞ্চলের লেখালিখি থেকে এঁরা বিভিন্ন নিজস্ব এবং ভৌগলিক কারণেও বিচ্ছিন্ন ছিলেন। এই বিচ্ছিন্নতাটা এঁদের কাছে কাঙ্ক্ষিতও ছিল। আর বিভিন্নতার আর এক অনুঘটক ছিলো বিদেশী কাব্যসাহিত্য, বহুশিল্প ও সংস্কৃতির সান্নিধ্য।

পরিবিষয়ী কবিতার শ্বেতপত্রে (কৌরব পত্রিকা নং ১১১, ফেব্রুয়ারি, ২০১১) ও অন্তর্জাল আয়োজনে (কৌরব অনলাইন সংখ্যা ৩৪-য়ে https://www.kaurab.com/kau34/) শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বহুশিল্পবাদ-য়ের কথা লিখেছিলেন। বহুশিল্পবাদ-এর ধারণাটা Bob Grumman প্রবর্তিত Pluralaestheticism সংজ্ঞার সমান্তরাল। শান্তনু লিখেছিলেন – ‘বহুশিল্পের সমন্বয় বা বলা ভালো এক বা একাধিক শিল্পের সম্ভরণ সহ একটি শিল্পবস্তু যা একযোগে পাঠযোগ্য, দর্শনযোগ্য, শ্রাব্য। অর্থাৎ একাধিক প্রক্রিয়াতেই তাকে গ্রহণ করতে হবে নচেত পুরোপুরি গ্রহণ সম্ভব নয়। শুধুমাত্র বহিরঙ্গেই নয়, অন্তর্দর্শনেও এর প্রতিফলন ঘটবে। খণ্ড জ্ঞানচর্চার বদলে অখণ্ড জ্ঞানচর্চার কথা তুলে ধরতে চাও পরিবিষয়ী কবিতা’। এ সংখ্যায় সেই আদর্শগত একটা প্রকল্প আমরা দেখতে পাই।

দেবেশ গোস্বামী ভারতীয়-ফরাসী এক আন্তর্জাতিক শিল্পী যাঁর উপস্থাপন ও অনুস্থাপনশিল্প পৃথিবীর অসংখ্য দেশে প্রদর্শিত হয়েছে। এই সংখ্যায় প্রকাশিত ওঁর শিল্পচিত্রে মর্মরের নিস্তব্ধতার কেন্দ্র থেকে চয়িত ফুল নির্বাকের অধরা ধ্বনি ও নান্দনিকতাকে প্রকাশ করেছে এক শান্ত অভিনবত্বে। শিল্পীর নিজের বয়ানে – ‘এই কাজগুলিতে আমার অনুভূতিগুলি প্রকাশ পায় মেজাজের ভিন্নতায়; যা কখনো ‘আমি’ একবচনে, কখনো বা প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত একটি অনন্য বা ক্ষুদ্র বিন্দু হিসাবে। আমি কী? ‘Ce que je suis’ – আমি কি নিজের উপস্থিতি? শুধুই শরীর? নাকি শারীরিক কাঠামোর বাইরেও একটা আমি ধরা দেয় ভাষার, সংস্কৃতির বা ভৌগোলিক অবস্থানের চৌহদ্দি পার করে? ’। দেবেশের শিল্পকর্ম দর্শনের প্রতিক্রিয়া বা প্রতিশ্রুতি থেকে শান্তনু লিখেছেন এক প্রত্যুত্তরী কবিতামালা যা দেখাকে আরো দেখাতে চায় যেন, তার ভেতরে-বাইরে অনুসন্ধানে যায়, অনিশ্চয়তার বিশালক্ষের অন্তহীন দিকটায় চেয়ে থাকে, বলে – ‘নিশ্চিত নিশ্চিহ্ন হবে বলে অপেক্ষায় থাকে অনন্তকাল’।             

আর্যনীল

গ্রীষ্ম, ২০২৪

||     ||    ||    ||