Poems by Shamsuddin Shipon | Kaurab ONLINE 63/2024

 

কবিতা

শামসুদ্দিন শিপন

 

প্রথম সঙ্গম থেকে

 

প্রথম সঙ্গম থেকে ফিরে, প্রথম সাঁতার শিখে

মনে হয়েছিল এই ভূপৃষ্ঠ, এই জলস্তরের

সমন্বয়ে এ পৃথিবী গঠিত; ভাষা প্রধান সব

সৃষ্টিকূল; কিংবা ওজনস্তর সূর্যের ক্ষতিকর

রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে। এখন আমার

চিন্তা, শেষ পাণ্ডুলিপি, সৌরমর্মে তোমার দূর্যোগ।

এতোগুলো দিন, এতোগুলো রাত সবই নির্জন

তবুও রক্তপাতের ভয়ে ফুল ফোটে; শ্রোতা উড়ে

চলে যায় বহুদূরে, চৌচির ময়দানের আড়ালে...

এখনো সন্তানহারা শোকে মহাদেশ লজ্জা পায়!

যেন কিছু মৃত্যু অনশনকামী: বন্ধু সেলিমের;

আর কিছু তারা, মরে-যাওয়া মৃগের মত উজ্জ্বল।

অথচ তুফান তুলে, দেশান্তরে, কেমন তোমার

হাতের লেখা, উৎসর্গপত্রে: সুস্থ আলোয় দেখি...

 

 

আমার বিবরে ক্লান্ত

 

আমার বিবরে ক্লান্ত কৈলাশ জেগে ওঠে নিশীথে।

সহজ শৈবাল খেলা ক রে সারাদিন। অতঃপর

গ্রীষ্মের শুকনো ঘাসে, ধান কাটা শূন্য মাঠে: বৃষ্টি

নেমে আসে; কৃষকের পূর্ণমুখ ভেসে ওঠে জলে।

বোধের বিশাল অশ্ব, জয়ী হ য়ে ফিরে আসে ঘরে।

সে-সব ফুলের সুখে, মনে মনে খুশি হয় কীট

অথবা সেই সাধনা থেকে আবির্ভূত হয় প্রেম।

আমার ভেতর মরে যায় তোমার স্থুল বাসনা...

তবু জ্যোৎস্নার লাল কথা পৃথিবীতে পড়ে থাকে।

বনের শেষ আলোকে মনে হয় মহৎ প্রবন্ধ

কোনো ছন্দের ভেতর আজো এইসব মিলে-মিশে

থাকে; সদাঙ্কিত চিত্রে দ্যাখা যায় বিবর্তিত ব্যথা।

যে ব্যথা তোমার দেহে ছিল একদিন; অতঃপর

এসেছে শিল্পের পথে, এখন আমার অন্তস্থলে...

 

 

 

পাখির নিঃসঙ্গ ডিমে

 

পাখির নিঃসঙ্গ ডিমে এসে পড়ে সিন্ধু শকুনের

চোখ, সূর্যাস্তের লাল ফেনা; পাহাড়ি ঝর্ণার মত

ঠোঁট তুলে ধানবীজ গিলে খায় সেই পাখি। বেঁচে

থাকে এই পৃথিবীতে, ছোট-বড় বনে, ঝাউনীড়ে।

অক্ষম মানুষ তার ভালো লাগে। অশোককাননে

সেও উড়ে আসে; কবে তার ডিম ভেঙে অসহায়

শাবক উত্তীর্ণ হবে কালজয়ী সবিতার মুখে?

আজ দেখি সেই সিন্ধু শকুনের চোখে শকুনত্ব;

শাবকটি উড়ে যায়, পক্ষীমাতা গান গায় নীড়ে

তবুও তো গাধাপিঠে বসে থাকে কতশত চাঁদ

পাখিটির মতো নীল চাঁদ; ছোট-বড় বনে, সব

রাতে জ্বলজ্বল ক রে পাখিটির মতো নীল চাঁদ।

মনে হয় সুবাতাসে ওই পাখি ওড়ে; ঠোঁট তুলে

আজ ধানবীজ গিলে খায়, বেঁচে থাকে ঝাউনীড়ে।

 

 

 

দ্রুত প্রদক্ষিণ ক রে

 

দ্রুত প্রদক্ষিণ ক রে ফিরে চলো তৃণশীর্ষে শুয়ে

থাকি। রমনীকাতর তুমিও চলো; এই বার্ষিক

ভ্রমণে ময়ূররাণী খুঁজি; সবুজ রোদের নিচে

কালের পুতুল হেঁটে বেড়ায়। সেকাল ছিলে ঘুমে,

এবার প্রত্যক্ষ জেগে ওঠো; নিমন্ত্রণ কর নাচে!

 

লাবণ্যময় পালক, চৈতন্যে বেদনা সবার আছে?

স্বপ্নে সিন্ধুর অভিজ্ঞতা বানিজ্যে বিস্তার করো

ব্যাকুল জানালা দিয়ে অর্জুনগাছের সূর্যোদয়ে

ফিরে চলো, পক্ষীস্নানে জলের তরঙ্গ বুঝে নেই।

 

সেই ডাকে কেবলই বহুদূর চলে যাওয়া সম্ভব

কিছুক্ষণ নারীশিখা, কিছুক্ষণ হৃদয়ে নীলিমা

যদি আলোকিত হয়, তবে সবই স্বার্থক। এই

বার্ষিক ভ্রমণে খুঁজি ময়ূররাণী; সে কোন দিকে

ধূলোর ফেনা তুলেছে, ডানা প্রসারিত করে, রাত্রে!

 

 

অজস্র পাতার পরে

 

অজস্র পাতার পরে কুম্ভের মতো চাঁদের লালা

রে সারারাত। আর তরল অন্ন ফেলে কঠিন

ফল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আজও অসুস্থ বালিকা।

যেন কত দুশ্চিন্তায় পড়ে নির্ঘুম নাবিক ত্রস্ত

ভূমধ্যসাগরে ভুলে গেছে দিশা! সেই ট্রামে করে

সে-কি ফিরেছে নিশীথে? যাকে সারারাত খুঁজি; ঝরে

অজস্র পাতার পরে কুম্ভের মতো চাঁদের লালা।

 

মুখোমুখি হ য়ে আছি: রাত্রির কীটের অন্তর্লোকে

স্বপ্নের শেষ তারকা জ্বলে ওঠে। উদ্ভিদের নীল

শাখা ধ রে যেন ঝুলে থাকে সৈনিকেরা, যুদ্ধকালে।

তবু পথের নিষেধ, পরম্পরাগত রীতি সব

ভুলে, সভাঘর ছেড়ে শৈবালনীড়ে ঘুমিয়ে আছি।

সেই গোপন পিঞ্জর থেকে বেড়িয়ে, সেই অস্ফুট

বেদনার বৃষ্টি ঝ রে কোন্ হৃদয়ের সানুতলে?

 

 

আমার আছে বহুমূল্য

 

আমার আছে বহুমূল্য ভালোবাসার শক্ত নুড়ি

জলজ অরণ্য আর বত্রিশ পা-টি নির্মল দাঁত।

যেখানে শব্দের ত্রস্ত হরিণের অমৃত অপেরা,

গৃহবিভায় নির্গত কালো ছাঁয়া, সেখানে কেবলি

ভেসে উঠে আমাদের প্রেমুৎসব... সেই প্রকৃত

ছত্রজলে শূন্যসত্তা, সে ভালোবাসার শক্ত নুড়ি।

 

এখনো উর্বর কথা ফেলে দিয়ে মহাযাত্রা পথে

একেবারে পদ্মরত্ন তুলে নেই; বিশেষ বিষাদে

পৃথক বজ্র গর্জন ভালোবাসি। তবু বিজনের

মায়া সম্বিৎ কীভাবে ভুলি? তীব্র পুষ্পলাল ব্যথা

কীভাবে ভুলি? ব্যধির অসহ্য নীল অনম্র যন্ত্রণা!

আমার আছে বহুমূল্য ভালোবাসার শক্ত নুড়ি

 

বিচ্ছিন্ন এই বিদ্যুৎ চক্র সক্রিয় উত্তাপে নিগূঢ়;

তবু আমার তাড়িত পাখি উড়ে আসে রতিকালে।

 

 

 

কবি পরিচিতি

শামসুদ্দিন শিপন এর জন্ম ১৯৯৮ বাসা কুড়িগ্রাম; বর্তমানে প্রবৃত্তিহীন জীবনযাপন কবিতা, চিত্রকলা ও সংগীত-এর উপর সবিশেষ আগ্রহী