কবিতা
অরিত্র চট্টোপাধ্যায়
আরেকটি
স্বপ্নের অনুবাদ
সাম্প্রতিক
একটি সমীক্ষায়
জানা গিয়েছে ভারতীয়রা
সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন
দেখে সাপের।
আমেরিকানরা
অবশ্য স্বপ্ন দেখে
তাদের দাঁত খসে
পড়ার।
নাইজেরিয়ানরা
দেখে মৃত্যুর, এবং
ফরাসীরা তাদের
প্রাক্তনদের। সম্ভবত।
তোমার
মুখের যে পাশটা
ছবিতে সবচেয়ে ভালো
দেখায়
তা
এইবার গোচরে এসেছে। এবং সামনে
দাঁড়িয়ে
যে
তোমায় নিরীক্ষণ
করছে এখন, তুমি
জানো সে সবসময়
থাকবে না।
এই
মুহূর্তটি দীর্ঘ, যেন
জিরাফের মত প্রায়। জিরাফ-ই।
তার
গ্রীবার অনায়াস
চলন দেখে তোমার
মনে হয় তার হাড়ের
ভেতর
অনেকখানি
আসলে ফাঁপা।
এই
একই কথা তোমার
মনে হয় তার চোখে
নিজের প্রতিবিম্বটুকু
দেখে।
জিরাফদের
অনেকে নির্বাক
ভেবে থাকলেও এমন
কিছু শব্দ সৃষ্টির
ক্ষমতা
তাদের
রয়েছে যা মানবজাতির
শ্রবণসীমার অতীত।
চারপাশের
নীরবতা না ভেঙে
তুমি তোমার সঙ্গিনীকে
একথা বল।
যে
তোমার দিকে তাকিয়ে
আছে সে কিছু বলতে
চায়। তুমি
তা জানো।
এবং
চলে যাওয়ার আগে
সে আঘাত করে। মাটিতে।
তোমার
হৃদয়। সেখানে
এমন একটা শব্দ
হয় যা তুমি শুনতে
পাও।
তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রিত ওই
টেরারিয়ামের দিক
থেকে যেন কেউ ডাকে।
সেখানে
সারি সারি কাচ
ও তাদের ভারী পাল্লার
সামনে গিয়ে বোঝা
যায়
তোমার
ঠোঁটে এখন ঈষৎ
রক্তের আভা।
এবং
তার বিপরীতে কিছু
নিস্পন্দ সরীসৃপ। শীতল ও প্রত্যঙ্গবিহীন।
সাপেরা
স্বপ্ন দেখে কিনা
আমরা কখনোই জানতে
পারবনা
কারণ
তাদের চোখের পর্দা
নেই –
দেওয়ালগুলো
এগিয়ে আসার আগে
তুমি চেষ্টা কর
নীরবতা ভাঙার।
আর
এই স্বপ্নে তুমি
নিঃশব্দে হেসে
উঠলে বোঝা যায়
এখন
তোমার মুখের ভেতর
আর একটিও দাঁত
অবশিষ্ট নেই…
হলুদ
পায়ের মেয়েরা
যে
মেয়েটি আমার দরজার
সামনে এসে দাঁড়ালো
তার
পায়ের রঙ ছিল হলুদ।
আমি
শারীরিক অসুস্থতার
কথা ভাবি-
বিজ্ঞানের
প্রতি আমার অহেতুক
পক্ষপাতদুষ্ট
দুচোখ
বারে
বারে চলে যায় তার
অনাবৃত পায়ের কাছে
সেখানে
খোঁজে তার সামান্য
ফোলা ভাব,
কিংবা
চোখের নিচে, এই
অনাবশ্যক তল্লাশি
সে
টের পায় কিনা জানিনা, বুঝতে
দেয়না অন্তত
নীরবে
ঝাঁট দেয়, আলমারির
তলা থেকে উঁকি
মারা
বল্মীকরেখা
অনায়াসে মুছে ফেলে
খাতাখানি
তুলে ধরে সামনে, সই
করতে গিয়ে দেখি
ততক্ষণে
তার দৃষ্টি চলে
গিয়েছে বহুদূর, অন্যত্র।
তবু
ফিরে আসে আচম্বিতে, অযাচিত
কৌতূহলের বশে
জানতে
চেয়ে সেই পীতবর্ণের
রহস্য, আমি দেখতে
পাই
তার
শ্যামবর্ণা মুখে
লেগেছে সহসা রক্তিম
ছাপ
‘এসব
পুজোর জন্য’, বলতে
বলতে সে খুব হাসে
এলোমেলো
পা ফেলে, দ্রুততর
এগিয়ে যায় দূরে
দাঁড়িয়ে
দেখি। দেখি
সারে সারে অনাবৃত
হরিদ্রাভ পায়ে
মাথায়
সিঁদুর, তেলাঙ্গানার
মেয়েরা একে একে
নামিয়ে
রাখছে
ভোগ, মন্দিরে
ইষ্ট দেবীর পায়ে, মঙ্গলকামনা
করছে
একমনে বর্তমান
কিংবা ভবিষ্যতের
স্বামী, সন্ততিদের।
হয়ত
অহেতুক তবুও অমোঘ, এই
একই বিশ্বাসের
বশে,
প্রাচীন
এই দেশের পূর্বপ্রান্তে
মেয়েদের পায়ের
রঙ শতাব্দীভর
কীভাবে
হলুদ থেকে লাল
হয়ে গিয়েছে আমি
জানি।
আমি
জানি যেভাবে বহু
যুগ ধরে, কিংবা
এখন
যেভাবে
মেদিনী এখানে সেজে
উঠছে পীত, লোহিত
ছাপে
অনেকটা
সেভাবেই বহু দূরে, শীতল
সমুদ্র পেরিয়ে
সাদা
মানুষদের
সেই দেশে, ধীরে
ধীরে সবুজ হারিয়ে
ফেলা
মাটির
ধূসরতা ঢেকে রাখছে
লাল, হলুদ কত
রঙের পাতারা।
তেমন
কোন সঙ্গতি নেই, তবুও
এরকম নানা অছিলায়
চিরহরিৎ-এর
দেশে ফিরে এসে
পর্ণমোচী সেই পৃথিবীর
কথা
কারণে
অকারণে দেখেছি
আমার প্রায়শই মনে
পড়ে যায়…
ক্যাফে
নীলোফার
নীলোফার, রহস্যময়ী, এর
আগে ও পরে তোমার
চোখ
আর
দেখিনি কখনো – দরজা
খুলে সবে ভেতরে
আসব
তার
উপক্রমে তুমি বা
তোমরা তিন তিন
অবগুণ্ঠিতা
আড়াল
থেকে হেসে উঠলে, চকিতে
ওই দৃষ্টি বিনিময়
নজর
করে আমি উঠে পড়ি – ছুতো
খুঁজি জায়গা বদলের
যেসব
দৃষ্টিকোণ থেকে
ফিরতিপথে তোমার
চোখে চোখ
রাখা
কার্যত সহজ মনে
হয়,
ঝরোখার ওপার থেকে
ছায়াটুকু
সরিয়ে
সরিয়ে তাকানোর
এই চেষ্টা – দূরতর
প্রেয়সীর কথা
ভেবে
ঠোঁট কামড়ানো অপরাধবোধ, এবং
এই শহরে বাড়ন্ত
ধূলিকণা, বিদ্যুতের
অভাব, ইরানি
চায়ের কাপে জমে
থাকা
অন্ধকার
মুখচাপা কলহাস্যে
কোথাও যেন পাতলা
হয়ে এল
দূরের
আজান, নিকটতর
বাল্বগুলোর আলো, সাদা
ও কালোর
মধ্যে
যে তোমার উঠে পড়া, কেউ
তার ছবি তুলে রেখেছিল-
এতবধি
লিখে রাখাটুকু
যে তুমি কোনদিন
জানবে না কখনো
জানলার
ওপারে ওই ফ্লাইওভার, স্বল্পপরিচিত
এই শহর এবং
তার
সমস্ত ক্যাফেদের
নাম আজ থেকে ক্যাফে
নীলোফার…
তোমার
মুখ একটা শহর হয়ে
যায়
ঘাসের
ওপারে কোথাও একটা
পিয়ানো বাজছে
উনবিংশ
শতাব্দীর একটা
সুর
রেললাইন
বরাবর এসে তাদের
ঠিক জুড়ে দিল
আকরিক
লোহা তামার মাঠ, একদা
সরাইখানা
ফেলে
যাওয়া বাড়িঘর, সমিতির
জীর্ণ পতাকা
টুকরো
অবিচুয়ারি, অনেকটা
ঝুঁকে পড়ে
সে
এইবার দেখে, আসলে
অতীতচারী-
কিসের
খোঁজে যেন এসেছিল, স্পষ্ট
মনে পড়েনা
পিঠের
ওপর নরম ওই স্পর্শ- ধীরে
ধীরে
চারুলাল
এখন, এই নির্জন
মাঠটির ওপর
পৃথিবীর
একটি নতুন রূপ
আবিষ্কার করে
সম্ভাবনাময়
এই পৃথিবীতে আরও
কিছুদিন
বেঁচে
থাকবে বলে, সে
চিঠি লেখার কথা
ভাবে,
তার
সাজানো অক্ষরের
ভেতর তোমার
মুখ
ক্রমশ
একটা শহর হয়ে যায় …
ডানা
মেলার আগে
ডানা
মেলে উড়ে
যাওয়ার আগে
একটা সরু
কাঠের সিঁড়ি
বেয়ে
মেয়েদের
খানিকটা নিচে
নামতে হয় – তাদের গা
ঘেঁষে
বেশ
পুরনো আরেকটা
ঘড়ি হিসেব
রাখে ফেলে
যাওয়া সময়ের,
প্ল্যাটফর্মের
দিকে এগিয়ে
যেতে যেতে
তাদের খোলা
হাঁটুগুলোর
প্রথম
কেঁপে ওঠা- অদূরে কোনও
এক সমুদ্রতটে
এইমাত্র
ভেসে
এল এক অশনাক্ত
যুবতীর দেহ, তার ফর্সা
পেটের ওপর
কেটে
রাখা
তারামাছের
নকশা, লবণাক্ত
ওই উজ্জ্বল
জ্যামিতি
দেখেছি
সিনেমায়, যেমন
নিজেকে আয়নায়
প্রতিনিয়ত
দেখে
একটা
সিনেমার
মধ্যে বেঁচে
আছি এমনটা
ভেবে নিতে
ইচ্ছে হয়,
ইচ্ছে
হয়, নিজেকে
দূরত্বে রেখে
খানিক ওই
প্রতিরূপটিকে
তুমি
বলে
ডাকি, দাঁতের
আড়ালে লেগে
থাকা সামান্য
রক্তের ধারা
আঙুলে
তুলে নিয়ে
তাকে দেখাই, দেখাই
দুপুরের
ব্যালকনিতে
দুটো
পায়রার
অশ্রান্ত
গোঙানি, নেপথ্যে
ফেরিওয়ালার
দূরতর স্বর,
আমার
নির্জনতাকে
কীভাবে ধীরে
ধীরে বুনে চলেছে, তোমাকে
হয়ত
বলেছি কখনো, ভালো লাগা
সহজ ছিল
সকালবেলার
দিকে
কিংবা
সহজতর
সপ্তাহান্তের
রঙিন
রাতগুলোয় - নিজেকে
নিজের
থেকে
দূরে সরিয়ে
রেখে এইরূপ
অনেক অনেক’কটি দৃশ্য, বহুক্ষণ
ছানবিন
করে আজকাল
হয়তো বা দু’একটি
বাক্যাংশ
পাওয়া যায়-
কবিতা
কি তাহলে ছেড়ে
চলে যাবে আমায়
এই প্রায়
মন্থর তিরিশে?
পৃথিবীতে
আজও
পৃথিবীতে
আজও এমন কয়েকটি
জায়গা রয়েছে
যেখানে
দাঁড়ালে নিজের
কথার প্রতিধ্বনি
শোনা যায়।
যদিও
নিজেরা ঠিক কী
বলল, সেকথা
তেমন
মন দিয়ে শোনে না
কেউই।
জুলাই
মাসের এক বিকেলবেলায়
এই লেখাটার
প্রথম
সম্ভাবনা তৈরি
হয়,
যখন এইরকমই একটা
লোক
ঠিক
এইরকম একটা জায়গায়
গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল।
তার
অপ্রস্তুত স্বনন – নিজের
এই অযাচিত প্রতিধ্বনি
তাকে
বড় বেশিরকম আত্মসচেতন
করে তোলে।
স্বনির্মিত
ধ্বনিরা তাকে ক্রমশ
ঠেলে দিচ্ছে
গভীর
অথচ অস্পষ্ট একটি
কেন্দ্রের অভিমুখে
এমনটা
সে হয়ত টের পায়। সংশয়ী দৃষ্টি
মেলে
তার
চারপাশের বলয়িত
পৃথিবীটিকে সে
দেখে,
দেখে
সুনির্দিষ্ট দূরত্ব
বজায় রেখে চলে
যাওয়া মানুষজন,
সাইকেল
আরোহী ওই ছেলেটি,
কিংবা
জলের ওপার থেকে
যে মেয়েটি হাত
নাড়ছিল।
তাকে
তার ভালো লাগে। প্রথম কিছুর
স্মৃতি মনে পড়ে
যায়।
সে
জানে এসব কিছুই
একদিন কারো মনে
থাকবে না।
এই
বিশ্বাসের ওপর
ভর করে একে একে
বলতে থাকে
তার
গোপন স্মৃতিগুলো। সেইসব স্মৃতি
যা
সে ভেবেছিল শেষ
পর্যন্ত তার মনে
থেকে যাবে।
যাকে
সে চেয়েছিল তার
জন্য অপেক্ষা করুক,
স্মৃতির
এই অসংখ্য প্রতিধ্বনি, শেষবধি
ততদূর
পৌঁছতে
পেরেছিল কিনা আমরা
জানিনা। আমরা
জানি
এসব
চেষ্টার মধ্যে
সে আসলে খানিকটা
সহানুভূতি
পেতে
চেয়েছিল, চেয়েছিল
তার জন্য
কেউ একটু হলেও
কিছুক্ষণ দুঃখ
পাক।
কবিতা ভাবনাঃ
কি লিখি, কেন লিখি
এই মুহূর্তে
আমি হয়তো কবিতা
লিখি কারণ তা আমার
কাছে ডায়েরি লেখার
থেকে সহজ। অথবা
একটু অন্য ভাবে
বলা যেতে পারে, আমার
কবিতাই আমার অসংলগ্ন
দিনলিপি, আমার
অভিজ্ঞতা, যার
পুরোটা বাস্তবে
একইভাবে না ঘটলেও, আমার
মাথার মধ্যে নিশ্চয়ই
ঘটছে, প্রতিনিয়ত। স্বীকার
করে নেওয়া ভালো, আমি
খানিক এস্কেপিস্ট, পলায়নী
প্রবৃত্তিপূর্ণ, বাস্তব, যেভাবে
তা সচরাচর ধরা
দেয় আমি তার থেকে
খানিক সরে থাকতে
চাই, সবসময়, খানিকটা
নিজস্ব এক বুদ্বুদের
ভেতর। কবিতা
আমায় সেই সুযোগ
দিয়েছে। কবিতা, তার
অন্তর্বর্তী যে
রহস্য, তার সুগভীর
নীরবতা নিয়ে আমার
কাছে ধরা দেয়; তার
প্রতিটি ছত্রে
যতটা বলা হল তার
চেয়েও আরও অনেক
অনেক বেশি যা কিছু
বলা হলনা, কিন্তু
তার সেই আবছা আভাসটুকু
রয়ে গেল, যেন
অজানা এক জগত থেকে
ভেসে আসা ক্ষীণ
তরঙ্গের মত যা
আমাদের রেডিও ট্রান্সমিটারে
অস্পষ্ট ধরা পড়ে, অনবরত
হাতছানি দেয়। এই আশ্চর্য
কুহক, যা আমাদের
দৈনন্দিন বাস্তবতা
কে খানিক আড়াল
করে রাখে আবার
একই সাথে তাকে
তুলে ধরে ভিন্ন
ভিন্ন আঙ্গিকে - তার
এই অপার সম্ভাবনা
আমায় আকৃষ্ট করে, তাই
হয়ত আমি ফিরে যাই
কবিতার কাছে বার
বার। “আমরা
লিখি কারণ এইভাবে
দুবার জীবন যাপন
করা যায়”- অ্যানাইস
নিন (Anais Nin) বলেছিলেন। জয় গোস্বামী
তাঁর একটি উপন্যাসের
নাম রেখেছিলেন “সুড়ঙ্গ
ও প্রতিরক্ষা। কবিতা, ক্রমশ
হয়ত তার জাদুবাস্তবতার
মাধ্যমে আমায় গড়ে
তুলতে সাহায্য
করেছে সেই নিজস্ব
সুড়ঙ্গ, পাঠক
অথবা নিজের সামনে
এসে দাঁড়ানোর আবার
একই সাথে পালিয়ে
যাওয়ার, অনবরত
লুকোচুরি খেলার
অদ্ভুত এই প্রতিরক্ষা। অথচ মজার
কথা এই, আমি কবিতা
পড়া শুরু করেছি
তুলনামূলক ভাবে
অনেক দেরিতে, অনেক
অনেক গল্প ও উপন্যাস
পড়ে ফেলার পরে, কিশোরবেলার
মধ্যাহ্নে। আজ
থেকে প্রায় ষোল
বছর আগে, কোন
এক সকালে ঘুম থেকে
উঠে, খাতার
শেষ পাতায় স্বপ্নে
যা দেখেছিলাম তা
লিখে রাখার চেষ্টা
করেছিলাম, কেন
এমন করেছিলাম তা
আর মনে নেই। মাঝেমাঝে
মনে হয়, হয়ত সেটাই
আমার কবিতা প্রচেষ্টার
সূত্রপাত ছিল। এরপর বহুবার, কবিতায়
স্বপ্ন লেখার চেষ্টা
আমি করেছি , কখনও
তা একান্তই নিজের, কখনো
তার উৎস অন্য কেউ, জানা
বা অজানা কোন মানুষ, স্থান, ঘটনার
স্মৃতি
অথবা অন্য
কোন শিল্পের মাধ্যম, একটি
ছবি, কোন সিনেমার
ফ্রেম, কিংবা
কিছু শব্দবন্ধ। হয়তো এইভাবে
যে জীবন, বা
তার সম্ভাবনা, যা
আমায় চেতনে বা
অবচেতনে কখনো ছুঁয়ে
গেছিল, কিন্তু
বাস্তবে হয়ত তার
অনেকটাই অধরা রয়ে
গেল, কবিতায়
তার কাছে ফিরে
যাই, তাকে এক
প্রকার ছুঁয়ে দেখার
চেষ্টা করি আমি
বারবার। জানিনা
এও এক প্রকার আত্মরতি
কিনা, একে hedonism বলা
চলে কিনা তা আমার
জানা নেই। কোন
এক বৈশিষ্ট্যবিহীন
জনপদের ছোট্ট মেলায়, আকাশে
ফুঁ দিয়ে একের
পর এক ছোট বড় বুদ্বুদ
উড়িয়ে দেয় কেউ, বিকেলের
আলোয় সেই বুদ্বুদের
গায়ে পৃথিবীর এক
রঙিন ছায়া পড়ে, দেখে মনে
হয় যেন কোন অজানা
জগতের প্রতিচ্ছবি। কবিতা আমার
কাছে সেই বাতাসে
ইতস্তত ভেসে বেড়ানো
কিছু আশ্চর্য বুদ্বুদের
দল,
কিছু খণ্ড চিত্রের
আধার, যা খানিক
পরেই এবং নিশ্চিতভাবেই
আবারো হারিয়ে যাবে, কেবল
বাতাসে ধূলিকণার
গায়ে হয়ত লেগে
থাকবে তার সামান্য
রেশটুকু।
কবি পরিচিতি
অরিত্র
চট্টোপাধ্যায় এর
জন্ম ১৯৯৪। বড়
হয়ে ওঠা উত্তর
কলকাতার উপকণ্ঠে। পেশায়
যন্ত্রবিদ, জীববিজ্ঞানে
আগ্রহী, বর্তমানে
বিড়লা ইন্সটিটিউট
অফ সায়েন্স অ্যান্ড
টেকনোলজি (BITS, Pilani)-র, হায়দ্রাবাদ
ক্যাম্পাসে সহকারী
অধ্যাপক। ভালবাসেন
বেড়াল, পুরোনো
চিঠি ও নস্টালজিয়া
সংক্রান্ত যা কিছু, জীবনকে
সিনেমার ফ্রেমে
দেখতে এবং অবসরে
তার নিজস্ব ম্যাজিক
খুঁজে বেড়াতে। কবিতা
বা যাবতীয় লেখালেখি
আসলে হয়ত
তাঁর কাছে, স্বপ্ন
কিংবা যে জীবন
অধরা রয়ে গেল তা
লিখে রাখার একরকম
চেষ্টা। প্রকাশিত
কবিতার বই, “সার্কিস
পারজানিয়ার ডায়েরি" (২০২১), “আমাদের
আশ্চর্য ভাষা” (২০২৩)।
Copyright © 2024 Aritra Chatterjee
Published 30th June, 2024