ছবি ছোটানো কবিতা 

 

 

চলচ্চিত্র ও কবিতা শিল্পের দুটো আলাদা দিক হলেও একটু গভীর ভাবে ভাবলে দেখা যায় যে কোথাও একটা একাত্মবোধ কাজ করছে। কেউ  কি বলতে পারে কখন কবিতা চলচ্চিত্র হয়ে যায়? আর কখনই বা চলচ্চিত্র আমাদের কাছে এক জীবন্ত কবিতা হিসেবে প্রতিভাত হয়? কিছু চলচ্চিত্রের প্রভাব এত মারাত্মক যে তা দেখার পর আমাদের মনে হয় যে এতটা সময় ধরে আমরা যেন এক চলমান কবিতার মধ্যে ছিলাম। কখন কখন আমরা শিল্পের এই দুটো দিককে কোনও ভাবে আলাদা করে উঠতে পারি না। বিশ্ব চলচ্চিত্রে এমন বহু নিদর্শন আছে, যার দিকে তাকালে চলচ্চিত্রকে কবিতা পৃথক আর কিছু মনে হয় না।

১৮৭২ সালে এডওয়ার্ড মায়ব্রিজ-এর চলমান ছবিকে ধরে রাখার প্রথম পরীক্ষার থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র শিল্প আজ অনেকটা পথ পার হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কিংবদন্তী শিল্পী ও চিত্রপরিচালকেরা চলচ্চিত্রকে বিভিন্ন ভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। আর চলচিত্রের গুনগত মানের উন্নতি করেছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রকমের শৈল্পিক দক্ষতার সৃষ্টি হয়েছে যা শুধুমাত্র চলচ্চিত্রে বর্তমান। এই সমস্ত কৌশল একান্ত ভাবে চলচ্চিত্র নির্ভর। আশ্চর্যজনক ভাবে তা আমরা অন্যান্য শিল্পে সে ভাবে দেখতে পাইনা। কিছু কিছু ব্যাতিক্রম অবশ্যই রয়েছে। এই সমস্ত দক্ষতার কিছু নিদর্শন যেমন,

 

১) ম্যকগাফিন (McGuffin)

২) পয়েন্ট অফ ভিউ শট (POV shot)

৩) ডলি জুম (Dolly zoom)

৪) কুলেশভ এফেক্ট (Kuleshov Effect)

 

এরকম অসংখ্য কৌশল এক শতক ধরে তৈরি হয়েছে, যা বেশিরভাগ সময়ে শুধুমাত্র চলচ্চিত্রে প্রয়োগ হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে যে কবিতা আর চলচ্চিত্রর যদি মূল স্রোত যদি এক হয়ে থাকে, তাহলে আমরা এর প্রয়োগ কবিতায় সেই ভাবে পাই না কেন? কৌরব অনলাইন ৬১তে আমরা দেখতে চাইলাম সেই সমস্ত কবিতা যা চলচ্চিত্র-উদবুদ্ধ পরীক্ষা বা কৌশলের প্রয়োগ চেয়েছে। সামগ্রিক ভাবে বলতে গেলে এই সংখ্যার উদ্দেশ্য হল জানা যে শিল্পীর চেতনায় যে শৈল্পিক দক্ষতার জন্ম হয় তা কি ভাবে শিল্পের এক চেহারা থেকে অন্য চেহারায় অতিক্রান্ত হয়।

কবিতা কি ভাবে সে সমস্ত দক্ষতাকে গ্রহণ করে,এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে হয়তো এক নতুন কবিতার পথ দেখাবে যা হয়তো কোনও এক সময়ে দৃশ্য কবিতা ও শ্রুতি কবিতার বিভাজিকা মিটিয়ে দেবে।

 

ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী

আর্যনীল মুখোপাধ্যায়

 

শীত, ২০২২