কবিতা
আন্তোনিও
কোলিনাস
অনুবাদ
- শুক্তি রায়
===
|
আমাদের
হিসেবে ৭০
দশকের কবি
আন্তোনিও কোলিনাস
সমকালীন
স্প্যানিশ
ভাষার এক
প্রধান নাম (জন্ম
১৯৪৬ বায়েসা,
স্পেন)। নানা
পুরস্কারে
সম্মানিত, সে
তালিকায়
স্পেনের
জাতীয়
পুরস্কার
থেকে শুরু
করে স্পেনীও
ভাষায় লেখা
কবিতার
সর্বোচ্চ সম্মান
রেইনা
সোফিয়া
পুরস্কারও (২০১৬)
আছে। শুক্তি
রায় দক্ষিণ
কলকাতার কমলা
গার্লস
স্কুলে
দীর্ঘদিন
ইংরেজি
সাহিত্য
পড়াবার পরে
স্বেচ্ছা
অবসর নিয়ে
এখন শুধু
স্প্যানিশ ভাষা
ও নানা
ইস্পানো
দেশের
সংস্কৃতি
চর্চাকে
সর্বসময়ের
কাজ হিসেবে
নিয়েছেন। |
বার্তা
এখনো
তোমার মনে পড়ে
পাতায় হারিয়ে যাওয়া
বুলবুলের
সেই রুগ্ন গান ?
সেই রাতে
আমার সঙ্গেই কেঁপে
উঠতে দেখেছিলাম
সাইপ্রাস
গাছের চূড়াগুলিকে
।
তোমার মুখের
উপর
আকাশ
বিছিয়ে দিল ছড়িয়ে
পড়া চাঁদের সুতো।
তারপর
চোখ বুজল জ্যোৎস্না
আর পাখিরা
আর সব
শেষে নিভে গেল
প্রতিটি নক্ষত্র
।
দেখতে পেলাম
তোমার
শরীর ছুঁয়ে বয়ে
গেল কী যেন এক অজানা
বাতাস।
মনে পড়ে
জলের মধ্যে আমাদের
দুজনের হাত ?
মনে পড়ে
গোটা প্রান্তর
জুড়ে রক্তাক্ত
ঈশ্বরের মতো নৈঃশব্দ
আর নতুন
এক দিন আগুনে পোড়াচ্ছিল
মিনার
আর পায়রাগুলোকে ?
(Envio)
অপরাহ্ন এক ফোঁটা অশ্রুজল
দিগন্তরেখায়
আসীন তোমাকে দেখি
যেন এক
আইলেক্স ঝোপের
অবয়ব,
একটার
পর একটা ক্ষতচিহ্ন,
যেন অনুভূতিকে
আচ্ছন্ন করে রাখা
থাইমগাছের ঝোপ
আর অবিরাম
বেজে চলা বাঁশির
সুর একই কথা বলে
বারবার
ব্যথার
মূর্ছনাতে, ফিরবে না, সে ফিরবে না
তোমার
জ্বলন্ত পাঁজরের
আলোয় খুলে পড়ে
অবিন্যস্ত বেণী ;
করতলে
পচনের দাগ ধরে
আর জেগে
থাকে ভালোবাসার
সেই সব স্মৃতি
যাতে
মিশে থাকে অপরাহ্নের
অশ্রু,
থেকে
যাবে চিরদিন তোমাদের
অস্বীকার করে,
তোমাদের
অস্বীকার করার
জন্য ।
(La tarde es una lágrima)
আফ্রিকার বুলবুলদের রাত
রাতের
কুয়োর মধ্যে পড়ে
গেছে আত্মা
সেইখান
থেকে, অনেক
গভীর থেকে সে তাকায়
বাতাস
বেয়ে ভেসে আসা
আফ্রিকার বুলবুলদের
পাগল
করা গানের মধ্যে
একটু
একটু করে বাড়তে
থাকা
জুনমাসের
চাঁদের দিকে।
(La noche de los ruiseñores africanos)
অন্ধ বনপথ
বিশ্বাস
কর, তোমার
জন্য আমার কোনো
করুণা নেই,
অনেক
দূরে রয়েছি এখন
কিন্তু স্মৃতি
যে রক্তাক্ত।
সেই তরুণী
রাত ছিল পাইন গাছের
উন্মুক্ত শরীরের
সুগন্ধে ভরা
অন্ধ
বনপথ ধরে
তোমাকে
অনুসরণ করতে পারিনি
আমি ।
করুণা
নয়, শুধু এক
ব্যর্থতার অনুভূতি
এক নরম
আর গভীর যন্ত্রণা
যার কোনো শেষ নেই।
সে সময়ে
তুমি আমাকে সুনজরে
দেখতে,
আমাকে
দিয়েছিলে ঠিক যতটা
আমার, তোমার
দেওয়া বিষ আমায়
শক্তি দিল
ঝাঁপিয়ে
পড়তে সময়ের উলটো
দিকে, সমুদ্রের
সঙ্গে যুদ্ধে
,
আর অন্য
সব ভালোবাসার মানুষদের
ভালোবাসার বিপরীত
মুখে ।
করুণা
নয়, এই চমৎকার
রাতে তোমাকেই খুঁজি
আকাঙ্ক্ষায়
তোমার
শীতল তারা, তোমার বৃক্ষশাখা,
তোমার নদী
তোমার
ঝাঁঝালো অম্ল রঙের
পিপাসায় আকুল
অসামান্য
শীতকালে আকাশের
বুক চিরে বরফের
ধারা।
বড় কষ্টে
এই সব বলি, আর্দ্র চোখে
যদিও
আমার মন শান্ত, সমাহিত :
তোমাকে
পাইনি কাছে, আমার দু ঠোঁট
ছুঁতে
পারেনি তোমার তুষারপাত, তোমার দিগ্ বলয়।
বিশ্বাস
কর, করুণা
নয়,
শুধু
জানি সমাগত সেই
গভীর সন্ধ্যায়
সেই পাহাড় থেকে
নেমে এলাম
জুন মাসের
আগুনের মতো পূত
ও পবিত্র ।
অবশ্যই
চেয়েছিলাম তোমার
কাছে ফিরে যেতে
কিন্তু
বিছিয়ে ছিল অন্ধ
বনপথ ।
(El camino cegado por bosque)
গান xxxv
বনের
মাঝখানে বসে আছি
নিঃশ্বাসনেওয়ারজন্য
।
শ্বাস
নিয়েছি সমুদ্রের
ধারে, আলোর
আগুনে।
ধীরে
ধীরে গোটা পৃথিবীটা
নিঃশ্বাস নেয় আমার
নিঃশ্বাসে ।
রাতের
বেলা রাতেরও রাত
আমার নিঃশ্বাস
হয়ে যায় ।
আমার
ঠোঁট প্রেমিক বাতাসের
ঠোঁটে ডুবে নিঃশ্বাস
নেয় ।
সব গোপন
কথা আড়াল করা মুখের
মধ্যে আমার মুখ
সমস্ত
জেনে ফেলা কুঠারাহত
গাছের মতো নিঃশ্বাস
নিতে থাকে
আর কালো শিকড়গুলির
মতো আমি নিঃশ্বাস
নিতে থাকি নীরবতার
মাঝে।
শাখাদের
সবুজ মর্মরের মাঝে
মিশে যায় আমার
নীল নিঃশ্বাস।
বসে আছি
নদীর খাতের মধ্যে
বুঝে ওঠার জন্য
কেমন
করে আলো হয়ে বয়ে
চলে আমার শিরা-ধমনীর ছায়া।
আমি যেন
ছিলাম আলো ছড়ানো
বিরাট একটা সূর্য,
যেন অসীম
একটা আকাশ আমার
বুকের মধ্যে ঢুকে
গেছে ফুসফুস হয়ে
আলো যার
নিঃশ্বাস আর ছায়া
হলো প্রশ্বাস।
যে দিনকে
গ্রহণ করে আর বিযুক্ত
করে রাতকে,
যার নিঃশ্বাসবায়ু
জীবন আর প্রশ্বাসবায়ু
মৃত্যু।
শ্বাস,নিঃশ্বাস, প্রশ্বাস, সব বৈপরীত্য একসঙ্গে
মিলে
সম্পূর্ণ
করে চেতনার বৃত্ত।
অনুভবের
মাদকতা, যেন
অসাড় হয়ে আছে
বর্ণহীন, বোধহীন, শুধু
ভেঙে টুকরো হয়ে
যাওয়া,
এই দৃশ্যমান
জগতে অদৃশ্য নির্যাসের
জন্য।
বনের
মাঝখানে আমি বসে
আছি নিঃশ্বাস নেওয়ার
জন্য।
পৃথিবীর
মাঝখানে আমি বসে
আছি নিঃশ্বাস নিতে
চেয়ে।
স্বপ্নহীন
ঘুমে কিন্তু অনেক
গভীর স্বপ্ন ছিল
আর ঘুম
ভেঙে আমার ঠোঁট
নড়ে ওঠে, বিড়বিড়
করে
সুরভিত
এক আলোর মধ্যে,"
যাকে চিনতাম,
সে আজ নীরব
আর যে
কথা বলছে, তাকে তো চিনে
ওঠা হয়নি আমার”
হারিয়ে যাওয়া বন্দিনী রমণীয়তার
কবিতা
আমার
স্বপ্নের একটুখানি, তোমার শরীরের
উপর পায়রাগুলি,
বনের
মাথায় চাঁদের ম্লান
উপস্থিতি,
অথবা
নক্ষত্র থেকে সদ্য
ঝরে পড়া তুষার
।
এই কোমল, মসৃণ, বেদাগ
শরীর
দৃঢ় স্তম্ভকেও
মাটিতে মিশিয়ে
দেয়,
ছিটকে
যায় আমার সবচেয়ে
পবিত্র স্বপ্নের
উচ্চতম রাত্রির
ছাদ ।
তোমার
শ্বেতশুভ্র গ্রীবা
ও কপাল যেন সূর্যোদয়ের
রুটি,
আদরের
কঙ্কাল, শিরা
উপশিরা যেন মনোমুগ্ধকর
প্রস্রবণ...
এখানে
রয়েছে নদীর মতো
উন্মুক্ত দুটি
বাহু...
অক্লান্ত
ধমনীগুলি, একটি চুম্বনের
গৌরবে
সর্বস্ব
সমর্পণে উন্মুখ
সারা জীবনের ভালোবাসা
।
আমার
আদরের ছোট্ট প্রিয়তমা, মনে রেখো তোমারই
জন্য
জুলাই-এর রাতে আমি বন্দিনী
রমণীয়তার সন্ধানে
দুঃসাহসী
অভিযান ভুলেছিলাম
(Poemas de la belleza cautiva que perdí)
শহরটা মৃত
এই মৃত
শহরে একবার মরেও
কি তোর সাধ মেটেনি ?
আবার
ফিরে এসেছিস এর
আলো দিয়ে সাজানো
ক্যানসার
ধরা দেওয়ালগুলোর
কাছে ?
স্বপ্নের
জ্বলন্ত অঙ্গার
ইতস্তত ঝলসায়
আর জ্বলে
সেই ঠোঁটে
যাকে
সুন্দর বলে ভাবতিস ?
ধ্বংসস্তূপ
খুঁড়ে, তুই
কি মানতেই রাজি
নোস
যে এখানে
কল্পনার পাখির
মতো ভালোবাসা ছিল
এক কালে ?
বৃষ্টি
পড়ে, পড়তে থাকে,
তার ধারাসঙ্গীতের
রং কালো,
এই সব
পথঘাট ভরে থাকে
ক্রুশবিদ্ধদের
মিছিলে,
যারা
মৃতপ্রায় অথচ পরিশ্রম
করে চলে,
অসমাধিস্থ
মৃতদেহগুলো উল্লাসে
চিৎকার করে, হাসে।
এইখানে
সম্ভবত এখনো পড়ে
আছে
থেঁতলে
যাওয়া ছড়ানো ছিটোনো
স্বপ্ন,
আর একটা
পাগল বলে যেতে
থাকে
"আলোর
কাছাকাছি আছ তোমরা,
আলো কাছাকাছি
আছে "
কিন্তু
রিক্ত আর শীতল
এক নীরবতা
মাঝে
মাঝে তোমাদের উত্তর
দেয় ।
যদিও
খুশি খুশি অন্ধ
মৃতদেহগুলো
চমৎকার
সেজেগুজে যাতায়াত
করে,
মৃতেরা
অনবদ্য সব মৃতেরা
।
শুধু
তিক্ত এক ধাতব
শব্দ শোনা যায়
সেই রাতে
এক বিশাল
ঘন, কালো লোহার
পাতের মতন ।
( La ciudad está muerta)
একটি কবিতা
ঝোপের
ধারে কিংবা শান্ত
জলাশয়ের কিনারে
হলুদ
হতে থাকা
আপক্ক
চাঁদের নিচে
হরিণেরা
ডাকে এবং সাড়া
দেয়,
চলে যায়
আর আমাদের নিয়ে
আসে
( বুলবুলের
মতো) বাতাসের
সঙ্গে
আমাদের
প্রতীক্ষা অন্য
এক জীবনে
যেখানে
মৃত্যু নেই ।
(Un poema)
===