কৌরব
অনলাইন
ধারাবাহিক
সংযোজন-৯
মার্চ
২১, ২০১৬
সূচি
কবিতা
সৌমনা
দাশগুপ্ত
===
|
সৌমনা
দাশগুপ্তর
জন্ম
জলপাইগুড়ি
শহরে। সেখানেই
পড়াশোনা ও
বসবাস। ১৯৯০
দশকের সময়
থেকে উত্তরবঙ্গের
কবিতায়
অত্যন্ত
স্বতন্ত্র ও
আলোকিত কিছু
নারীকলম
ভাস্বর হয়ে
ওঠে। সৌমনা
তাঁদেরই
একজন। ওঁর
কবিতার
বইয়ের মধ্যে
রিয়েছে বেদ
পয়স্বিনী (২০০৬), খেলাহাট (২০০৮), দ্রাক্ষাফলের
গান (২০০৮)। ২০০৭
সালে
কৃত্তিবাস
পুরস্কার
বেদ পয়স্বিনী
বইটির জন্য। |
ভূমিকা
আমি কেমন
আছি এটা মনে হয়
মানুষের আদিম ভাবনা।
সেরিব্রাল
বা হার্দিক সে
যেভাবেই হোক না
কেন মানুষ সবচেয়ে
বেশী একথাটাই ভাবে।
কী
লিখি কেন লিখি
তার কোনও ব্যাখ্যা
বা অজুহাত দিতে
বসিনি, তবে এই ভাবনা
যে আমাকে লিখতে
বাধ্য করে সেটা
স্বীকার করে নিতে
হয়ই। তাই যেসব
অনুষঙ্গ নিয়ে বেঁচে
আছি,
যে প্রক্রিয়ার
মধ্যে আছি তাই
আমার লেখায় উঠে
আসে বারবার।
দেখা
পারিপার্শ্ব খুব
দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তাল
রাখতে পারছি না।
মেনে
নিতে হচ্ছে।
ডুয়ার্সের
এক খুদে শহরের
মানুষ আমি দেখতে
পাচ্ছি হারিয়ে
যাচ্ছে আমাদের
সবুজ টানেলগুলো।
তবু
থাকতে হচ্ছে।
চিবিয়ে
দিব্যি হজম করে
ফেলছি অ্যাসফল্ট।
আসলে
কীসের দিকে যাচ্ছি
কিছুই জানি না।
শীত এবং ছায়া
বিষয়ক
এক
তাহলে এবারের
মতো শীত চলে গেল। চলো
হাওয়ায় ফিরি। তুমি
যে কার্পেট দিয়েছিলে
আমি তার থেকে রঙ
খুলে খুলে টাঙিয়ে
দিয়েছি। এবারে রোদের
দিকে যাবো ভাবছি। সমুদ্রের
দিকে। একটা
ডলফিন রোজ স্বপ্নে
ঢুকে যাচ্ছে। ওকে
পাশবালিশ বানিয়ে
ঘুমোচ্ছি আজকাল। এই
শীতে কমলালেবু
খাইনি। মানে
লেবু হয়ইনি কোনও
গাছে। তাহলে
কী কী করা যেতে
পারে। কমলালেবুর
খোঁজে বেরিয়ে যেতে
পারি নাহলে রোদের
দিকে গিয়ে কিছুটা
কমলা রঙ কিনে আনতে
পারি। কিন্তু
আমার যে কিছুটা
কমলা গন্ধ চাই। রোদ
কিছু জানলাতেও
আছে, ওতে হবে
না। এবারের
বিশেষ বিশেষ খবরগুলি
হলো আমরা ক্রমাগত
একটা আগুনের দিকে
যাচ্ছি। মাটি ক্রমাগত
হলুদ। হাওয়া। হলুদ
হাওয়া। এই
সামগ্রিক পান্ডুরোগ
বা বসন্তউল্লাসকে
কোনও ব্র্যাকেট
দিয়ে কমন নিয়ে
বা শুন্য দিয়ে
গুণ করে উড়িয়ে
দেয়া যাচ্ছে না। এসো
হাত ধরো। যতক্ষণ
না সামগ্রিক হলুদ
আমাদের ছুঁয়ে ফেলছে
ছুটতে থাকি। কমলালেবুর
কাছে যাওয়ার জন্য
যতক্ষণ না দম শেষ
হয়ে যাচ্ছে চলো
ছুটতে থাকি
দুই
নদীতে কান্না
ঢেলে দিলে
কেউ জানবেও
না তুমি কেঁদেছ
শুধু লোনা
হবে জল
গল্প সব ভাসিয়ে
দেবার
শেষ নেই শুরু
নেই
কেবলই পাড়
ভাঙা
বসতির হাড়গোড়
গল্প তখন
এক নদী
শুধু নুনটুকু
রয়ে যাবে পাথরের
পেটে
তিন
অহো রাই
ওহে রাই
কুসুম কুসুম
জবাকুসুম
কুসুম বললেই
হয় কেশতৈল
নাহয় ডিমের
ব্লটিংকাগজ
চেটে খায়
ফুলেল
আমি ডিম বুঝি
আদিবোধ, জন্ম
সবুজ গড়াচ্ছে
মোটা ধারায়
সিট্রোনালা
পাখি
পাখির বাসা
খড়কুটো, জোনাকি
রাই তুমি
দর্জি
কেমন নিপুন
কারিগরি
কারিগরি
খেলা, রাই
ভালোবাসো?ঘিনপিত?
এভাবে লিখতে
তোমার গোলাভরা
সোনালি সোনালি
ধানখেতে
কাঁকড়া
বৃশ্চিকচিহ্ন
লেগে
রোদ। পুড়ে
গেল
চার
টিউবে চাপ
দিতেই ভচাৎ করে
যে রঙ বেরিয়ে এল
তাকে চিনি না
শীতকাল
বালিশ
রবিশস্য
চড়ুই
লেপ ও
ডিম বিষয়ক
ধানের চরম
থেকে
উষ্ণ
ভাতের ওপর
লাল
ঝোল ও মাংস
তা এবং জন্ম
ইজেলে চড়ানো
ক্যানভাস
ব্রাশের
কামড়
ইয়েলো অকার
গেরস্তি
পুরাণ
ভার্মিলিয়ান
ক্ষেপে গেলে
তুমি বলো
চাপ
আমি নিঃশ্বাস
পরিত্রাণ
শূন্যকাল
ঢুকে যায়
ওয়েবজিনে
এরপর ছাদ
একটা বেলুন
এসে যাচ্ছে
প্রচ্ছদে
হাওয়া, ছিপছিপে
হাওয়া আর
হাওয়া
পাঁচ
স্বরবর্ণের
নাম ভাত
ব্যঞ্জনবর্ণের
নাম নুন ও মরিচ
ধাতুরূপ
ঘাম ও রক্ত
পার্সপেক্টিভ
বদলে বদলে যায়
মেঘ থেকে
রোদ নয় বৃষ্টি
নয়
শুশ্রুষাও
নয় কার্বন...
সবটা দুপুর
জুড়ে জমাট ত্রিভুজ
পিথাগোরাসের
ঐ টেরচা রোদ্দুর
জন্ডিস রঙ
হাতুড়ি ও
কয়লা বিষয়ক গল্প
ধুয়ে মুছে
বিকেল বানাই
ল্যাভেন্ডার
অ্যারোমাসঞ্জাত
বিকেল হাঁটতে বেরোয়
বিকেলের
সাথে ঐ যুবক যুবতী
বা যুবকেরা
যুবতীরা
একে অন্যের
রেপ্লিকা
পাহাড়ের
নিভৃত গ্রামেও
সেই টিভিস্ক্রিয়
নতুন প্রজাতি
ছায়া ভেঙে
ছায়া মেশে অন্য
ছায়ায়
তালগোল ছায়ার
পিন্ডলি
ক্ষিতি অপ
তেজ মরুৎ ব্যোম
হীন
এই হাওয়ালিপি
বিভ্রান্ত
হরফরাজি স্বচ্ছ
পর্দায়
কুঝিকঝিক
ঝিঞ্চিকি নাচ
সৌরবলয় থেকে
সরে এসো
চলো আঁধারের
গীটার বাজাই
ছয়
মাটি খাচ্ছে
জল
মেয়েটি চুল
খুলে দিতেই
ছড়িয়ে পড়ল
বনফায়ার
ম্যানহোল
উপচে পড়ছে
ঢেকে যাচ্ছে
উইন্ডস্ক্রিন
দৃশ্যকে
পেছনে ফেলে
গড়িয়ে যেতে
যেতে
গাড়ি ঢুকে
যাচ্ছে দৃশ্যে
ল্যান্ডস্কেপে
ঢুকে যাচ্ছে
বৃষ্টিকাল
পাড়ায় পাড়ায়
মেঘ
বিলি করে
যে লোকটি
তাকে আমি
চিনি
পাকা কামরাঙার
রসে
জারিয়ে উঠছে
জিভ
বৃষ্টি দৌড়চ্ছে
বৃষ্টি ঢুকে
যাচ্ছে
ব্যথা দিচ্ছে
জল
সমাসবদ্ধ
ঝাঁপিয়ে
পড়ছে জল
সাত
চাঁদে চুমুক
দিচ্ছে নদী
কুয়াশার
ওপর একজন ভিখিরি
এঁকে ফেলছে
জোছনা
একলা কুকুর
হেঁটে যাচ্ছে
শীতঋতুর
দিকে
হাওয়ায় লোনা
গন্ধ
সমুদ্র সমুদ্র
বলে
যে মেয়ে চেঁচিয়ে
ওঠে
তুমি ওকে
ভুলে গেছ
ভুলে গেছ
সমুদ্র লিখতে
ফুসফুস লিখতে
বসে
লিখে ফেলছ
ক্রুশের গল্প
হাড়িকাঠ
হা্বিজাবি
যেদিন ঝঞ্ঝা
ঢুকে গেল
ভরকেন্দ্রে, তুমি
ময়ূর লিখতে
বসেছিলে
নাচ লিখতে
লিখতে
লিখে ফেললে
শীতকাল
কালো পলিথিন
ফুলদানিতে
সাজানো দাঁড়কাক
ডানা ঝাপটাচ্ছে
ডায়রির একটা
পাতা
আট
একটা গ্রাম
লিখলাম। শহরও
একটু একটু ঢুকে
গে্ল। দৃশ্যগুলো
পালিয়ে পালিয়ে
যাচ্ছে। নিলামঘর
ভর্তি ল্যান্ডস্কেপ।
ছোট
মাঠ বড় মাঠ.... নদী.....
রেস্ত নেই নদী
কিনবার। একটা
গর্ত বসিয়ে দিলাম .. জল
ঢাললাম... জল
খেয়ে নিল গ্রাম,
আর মূল কথাটা
হ’ল নতুন
ঝকঝকে একটা নদী
চেয়ে বসলো গ্রাম।
নদী
কোথায় পাবো, কিছুটা
আকাশ লিখে দিলাম
গ্রামকে, আকাশ
তো আমারও অল্পই।
তাই
হাওয়াকে বললাম
আমাকে একটা বেলুন
ধার দিতে। ঘর লিখতে
বসে জানলা পেলে
ছাদ পেলে তবেই
না বেলুন।ঘাসই
বা পাবো কী করে
কী করেই বা সবুজ।
তাহলে
আগুন জ্বালি, মাটি
পিষি, পুঁইমেটুলি?
আমার যে একঘর
রঙ চাই। না কী
রঙ চাই রঙ চাই বলতে
বলতে বেরিয়ে পড়বো
রাস্তায়। কিন্তু
আমি হাঁটতে থাকলেই
যে দৃশ্যগুলো পিছলে
পিছলে চলে যাচ্ছে
বিপ্রতীপে
নয়
আলো ভেঙে
দাও
মাঠে মাঠে
ধোঁয়া / ধোঁয়া মাঠ
কুয়াশা না
কী /
কুয়াশায় ধোয়া
টুকরো টুকরো
জল লেগে আছে
কুমড়োখেতের
হে
ভূত তাড়ানোর
হ্যারিকেন
আলো ভেঙে
দাও
ঝড় হোক
স্টেজে জোনাকি
সিম্ফনি
দশ
কত রোদ্দুর; ওইদিকে
যাওয়া হল না
লোহার গন্ধে
মাখামাখি, বসে
আছি
লিখছি মরচের
দিনরাত্রি
চামড়ার ভেতর
যে বিছুটির গাছ, ওকে
দুধেভাতে
রাখি, জড়িয়ে দিই
নতুন চামড়ায়
ঘরের ভেতর
ব্যাঙ, লাফাচ্ছে।
ঘুমের
ভেতর
কড়ায় অস্থিরতা।
ফুটছে।
ভাত
রান্না হচ্ছে
অন্ধকার
হাতে নিয়ে হেঁটে
যাচ্ছে একটার পর
একটা মেঘ।
ঘরের
ভেতর ঢুকে যাচ্ছে
ঘর
স্বপ্নের
ভেতর দাঁড়ি টানছে
কুয়াশা, পর্দা ছিঁড়ে
দেখি ইঁদুরের
গেরস্থালি, আখায়
হাড়গোড়
স্যালাইনের
বোতলের কোনও গল্প
নেই
এক ফোঁটা
এক ফোঁটা করে গলে
যাওয়া
===
Copyright
© 2016 Soumana Dasgupta Published 21th March, 2016.