কৌরব
অনলাইন ধারাবাহিক
সংযোজন-১৭
১৭ জুলাই,
২০১৬
সূচি
কবিতা
===
|
সুস্মিতা
পাল মাঝে মাঝে
বাংলা বা ইংরেজীতে
লেখার চেষ্টা
করে। অন্যসময়
ভাবনা বোনার।
বাংলা কবিতাগুলো
সচারচর ঠাঁই পায়
কৌরবে; বাকি লেখা
আঁতুড় ঘর ছাড়েনি
অনেক দিন যাবৎ।
সুস্মিতার
ইংরেজী সাহিত্য
নিয়ে পড়াশুনা
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে। অসম্পূর্ণ
এম ফিল। আপাততঃ
অস্ট্রিয়ার গ্রাজ
শহর নিবাসী। কবিতা
পরিণত হয়েছে কৌরব
অনলাইনের হাত
ধরে। সুস্মিতার
কবিতা আর আকাদেমিক
লেখায় অভিজ্ঞান
বিষয়ক ভাবনা ফিরে
ফিরে আসে। |
ভূমিকা
একটা
জমাটবাঁধা নিখাদ
অন্ধকার। স্কিজোফ্রেনিয়া।
সেই গর্ভের ঔরসজাত
আজকের আমি আর সেই
আমার ঔরসজাত এই
পর্বের কবিতারা।
শাদা আকাশের প্রেক্ষাপটে
বসন্ত আমপাতার
অক্ষররেখা।
চোদ্দ
বছর। দমবন্ধ বিষন্নতা,
অকথ্য শব্দের দাপুটে
বিচরণ, যন্ত্রণার
স্মৃতি, মৃত্যু
চেতনা, পচনের বিষ
গন্ধ- সব রয়ে যায়
ওষুধের আড়ালে।
আমার স্কিজোফ্রেনিয়া
ধরা পরার চোদ্দ
বছর পর হাতে আসে
একটা বই- “এ বিউটিফুল
মাইন্ড”। জন ন্যাশ
ও আমি এক সূত্রে
গাঁথা হয়ে যাই
এই রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতায়।
জন ন্যাশ
ত্রিশে পৌঁছে যায়
যেখানে, সেখান
থেকে উত্তরণই হতে
পারে, ভেবেছিল
জগৎ। কিন্তু ত্রিশ
বছর বয়স থেকে সে
হারিয়ে যায় এই
অসুখে। ঝুর ঝুর
করে ঝরে পড়তে থাকে,
স-ব-টু-কু যেন তারার
খোঁজে মাটি। সেটা
১৯৫৮ সাল।
তার
থেকে ঠিক ৫৮ বছর
পর এই আমি ভয় পাই
ছুরি দেখে। চোদ্দ
বছরের সঙ্গী, এই রাসায়নিক
সত্য, যেন মাথা
চাড়া দিয়ে ওঠে।
স্কিজোফ্রেনিয়ার
জ্বলন্ত দগদগে
ঘা ফিরে আসে আত্মহত্যার
ভয়ঙ্কর ভাবনার
সাথে। সেই ভয়ের
বিশোষিত শব্দ দামামা
হয়ে বাজে খুলির
মধ্যে। কল্পনা
তখন বাস্তবে এসে
কুরোসাওয়া হয়ে
যায়। তখন যন্ত্রণা
সিঞ্চন করা আয়ত্বের
বাইরে। আয়ত্ব তখন
শূন্য হয়ে যায়।
একদিকে
ওষুধ ও থেরাপি,
অন্যদিকে ন্যাশের
জীবনী পড়া আর কবিতা
লেখা-এই দুটির
প্রতিচ্ছেদে জীবনে
ফিরে আসার যাত্রা
শুরু হয়। আরো
একবার।
“I want to find a
different …underpicture of a non-observable reality”- John Nash,
1957
এ জগৎ
সে জগৎ নয়
যে জগতে
এ জগৎ হয় না
শব্দ থেকে
স্বর স্বর
থেকে কথা কথা থেকে
শব্দ শব্দই
তারপর
দেখি
নিই দেখি না
শুনি
নিই শুনি না
বুঝেছি বুঝি না
চঞ্চল ফ্লুরাইডে-ও
এখন ব্যতিব্যস্ত
ঘর
আরো শান্ত শিব
স্থবির
পাঞ্জাবির পকেটে
সর্বক্ষণ
যদি
দেখে নিই
যদি
শুনে নিই
যদি
বুঝতে ভুলে যাই
–
পরা থেকে অপরা
তোমাদের বেদবুকে
থাক
(যেন) অসুর ও না
চায় এমন জীবন।।
“...a
lightness”– Tilla Weinstein about John Nash
কখনো সখনো দেখা
যায় মাথায় মারপিট
খেয়ালি
খেয়াল
খেয়া
খ
আন্তাবরি চতুষ্কোণ
বর্ণপরিচয় হয়ে
যায়। এখানে ছড়ানো
মেঘ
ওখানে বেদপাঠ্য
“দিন
কেমন কাটবে?”
- এক জোড়া চোখ মেয়ে
হয়ে খোঁজে-
মেঘে
আব্বুলিশ মেঘে
বারান্দা মেঘে
অপঘাত
চৌকো
চৌকি
চক
ক
এবার
থাম না!
“…pure, very pure…”–
Peter Lax about The Institute for Advanced Study in
Princeton
ভিন্ন বাতাসের
জন্য ভিন্ন কামড়।
কুড়মুড়িয়ে। মুড়মুড়িয়ে।
কুড়কুড়িয়ে। মটাস।
শাদা
চামড়া জীবনের
বেশ্যা
লাল
হয়ে যায় নির্বিকার
থাকে না
খোলোস আর কি
কুক্ষণে জন্ম!
তুমি
আবর্জনা মাতৃত্ব
দিবস
আরো
এক তাল ধান
ধ্যান
শক্ত মা
অগণতান্ত্রিক
সবাই
মাথায় যারা
কাজ করে
মাথা কুটে
মরে-
এই ঘাসে
মেঘফুল
অবিশ্রান্ত কার
কথা ৎ
শব্দ
চি
গুঞ্জন
বাহুমূল
খুলে নূন্যতম মর্যাদার
দিব্যি দিয়ে তারা
বন্যা করে সেই
মেয়েটাকে আর তার
মেঘের ঘুলঘুলি
সমান্তরাল তখন
ন্যাশ
নাশ
ন
দ কেন
শিখতে বলেছিল সিক্ত
পাঁচ মুখ?দয়া, দান
না করলে দমন হয়
না বলে? ন
শিখত যদি,
নতি
নাদ
নশ্বর
আর সব বাদ দিয়ে,
বর্ণমালার স্রেফ
দন্ত্য ন ।।
“…solitude is the school of genius”– Edward Gibbon
আর একটা
রিক্ত অক্ষরমালা
জল থেকে
ফুটবে
বায়বীয়
তরল অবস্থায় সরলীকরণের
ঋজু দাসত্ব দ্বার
খুলিয়ে
খুলি
খেলা
খ
ফুটন্ত
বর্গক্ষেত্র থেকে
লাফিয়ে নেবে বলবে
কেউ-
এখানে
ত্রিসীমানা শান্ত
নাভি, প্রয়োজনীয়
ক্ষয় নেই
তেল পালাচ্ছে
না অতিনাভীর পুল
থেকে
ওম চলে
যাচ্ছে না তৈজসপত্র
ধরে
মেঘ ছাদ
ঘাঁটছে না এ হাওয়ার
তালে-
বলো
কেন জল হুশ করে
আসছে না উপসাগরে?
ধাতু, বায়ু,
ব্যাধ
অপরিণত
চামড়া গলিয়ে
সুর
পোড়াচ্ছে সে
তিলে তিলে
বাঁধা সুর মুক্ত
করে দিচ্ছে, শুধু
বুঝতে পারছে না
কোন কিনারে আগমনের
দরজা রাখা দরকার।
এ কেমন ঈশ্বর যে
অন্তর্কোষীয় যাত্রায়
বিলম্ব করে, প্রত্যেক
বাঁকে এসে বলে
– এখানে
কে দাঁড়াবে আমার
জানা নেই, তবু তোমরা
বলো বুড়ো আঙুল
কার হওয়া উচিত...
“…They’re adults in the
crystalline world, infants in the real one.”-S.Cappell
ইচ্ছেদানার
লঘিমা ন’মাসের
শেষে ক্লিষ্ট
তখন নখ
নাক মুখ সাজিয়ে
কোল টইটম্বুর
এ হেন
জীবপ্রেম
ক্ষমা
করো চেয়েছি আমি
তবু কেন
দীন লাগে
উড়ন্ত
পারিখায়?
কথা প্রেম
রূপ ক্রোশ ক্রোশ
হাজার লক্ষ ক্রোশ
হেঁটে পুরাণে মিলায়
অবশ শরীরে
রুদ্ধ প্রাণপাত
মুক্তিকামনায়
ঠিক তখনি
শব্দ ধেয়ে আসে
যে শব্দের কোনো
কান নেই, গান নেই,
অবিনশ্বর কোনো
তাল নেই নেই সেই
শব্দ বলে
দীনতা
যার সে আদিরূপে
সক্ষম
হীনতা
যার তার বীর্যে
নয় বিক্রম নয়
ক্ষয়
ভয়
এদিক থেকে
ওদিক তখন চোখ ঝলসানো
অন্ধকার
সুর্য
অভিশপ্ত আঙিনায়
বাঁধা,
জীবন চুরি
করে এক হাত উড়ে
চলে যাই,
তখন কোল
নখ নাক মুখ নিয়ে
টইটম্বুর-
আমার রসের
ফল
ক্ষমা
করো চেয়েছি আমি,
তবু কেন
মৃত্যু গন্ধ গায়ে
সীমিত
স্বপ্নের মতন?
“…the emotion
gets you”-Ornette Coleman
“The flashes of
intuition were non-rational.” ( p.17)
মেঘের
যে শৈল্পিক কান্তি,
পাহাড় তা জানে
রোদের
যে প্রায়োগিক বর্ণ,
পথ তা চেনে
কিৎসুনে
নো ইয়োমেইরির১
কোনো ক্ষণে
সে এক শেয়ালসুন্দরী
আড়ালের
আল ডিঙিয়ে সেঁ
ধি
য়ে
যায় ... খোঁজে।
ছোট্ট
মেয়েটার গায়ের
গন্ধে কিছুই ঘটে
না পুষ্ট হৃদপিন্ডে।।
বছরগুলো
হারিয়ে যায়,
নিষ্ঠা
যাত্রা করে
স্মৃতির
উৎখাতের ওপর নির্ভর
করে
আবার শুরুতে
ফেরা :স্মারক
হয়ে থাকা প্রকারণগত
আনন্দমূহুর্তরা
আবার চেয়ে
দেখে রিক্ত শেয়ালসুন্দরী-
...।।
১ কিৎসুনে
নো ইয়োমেইরি : জাপানের
ভাষায় বোঝায় শেয়ালের
বিয়ে মানে রোদ্দুরে
বৃষ্টি হলে বাংলায়
যেমন কথিত আছে।
“…an idea of an idea…”-
Nash to Eli Stein, 1958
পলাশের
এদিকে বাগান, ওদিকে
বাগান
পলাশের
ঠিক তলায় মাটির
মধ্যে গেঁথে যাওয়া
কিছু একটা
যা ছুঁয়ে
দেখতে গেলে নশ্বর
হয়ে ভস্মীভূত মায়া
যা নুয়ে
ফেলতে গেলে বিপ্র
সতী হওয়া
যা স্বরে
বলতে গেলে এক ঘাট
আগে নেমে যাওয়া
অন্ধকারে
প্রত্যেকটি
বার আলো নিভতে
নিভতে যায়,
জলে ছাড়া
এক একটা ছোট্ট
দ্বীপ বাঁচায়
বৈশিষ্ট্য
প্রেম
আবর্জনা
চেতনার
এক চেতনা যন্ত্রণা
হয়ে বাড়ে
ক্লিষ্ট
সর্বনিষ্ঠ ভাবে
অজ্ঞান
স্বপ্ন দেখতে দেখতে
মানুষের ছাঁচ
হারিয়ে
যায়। যে সন্তাপে
আকাশ মিশেছে
পলাশের
তলায় বিছানো নশ্বর
মায়ায়
সে সন্তাপে
পুরানো জামাকাপড়
সের দরে
আস্তানায়।
এগিয়ে গিয়ে, প্রলোভন
দেখিয়ে
ভুল পলাশ
হেঁটে চলে যায়।
যে পলাশ
ছিল, তার এ দিকে
বাগান, ও দিকে বাগান
যে পলাশ
নেই তার ঠিক তলায়
মাটির মধ্যে গেঁথে
যাওয়া কিছু একটা
যা...
“…when a jet
accelerates past the speed of sound.” (p.217)
শব্দের
কান আছে, সে কানে
তালা ধরে
টুকরো
ছবি দিয়ে করা একটা
ছাতা
বৃষ্টি
বিন্দুর ছোঁয়ার
দৌড়
ঘাম
হয়ে নামে
অঙ্কে
শব্দে স্বরে
একটার
পর একটা ইচ্ছে
হওয়ার ফুল্কি
গালে,
কোমড়ে, স্তনে
সবটুকু
নিমেষে মিশে যেতে
পারে
এমনটা
জেনেও জানে না
সে।
সত্যি মিথ্যে
যাই বলো, কানে তালা
ধরে না, শব্দ কান
করে না।
“Pure conflict …
would arise in a war of complete extermination,
otherwise not
even in war.”- Thomas C.Shelling
এতটা
তরল তো নয়
যেখানে
ভ্রমর ঘর বাঁধে
এতটা
তরল তো নয় সেই ইঙ্গিত
যেখানে
লঘু প্রেম বাড়ে
বলতে
দ্বিধা
দ্বিরাগমন
শুধু অনিশ্চয়তার
বিবর্তনে
তারে
সুর তুলে গেঁথে
দেওয়া যায় যেমন
সম্বন্ধ প্রাচীন
তেমন
উজবুক ঊষ্ণীষ গায়...
তোমরা
তাদের বলে দিও
তবে শান্তিপ্রিয়া
আসবে না ঘরে
তোমরা
তাদের বলে দিও
তবে ওর সুর ভেজাবে
না দোর
তোমরা
তাদের বলে দিও
তবে ওর চাওয়া নেই,
ছাওয়া নেই
প্রতিবিম্ব
নেই
আলতা
পা’র লাল
নেই
ও যে
আমার মহা... ওর যে
কোনো মুখ নেই।
কল্পনায়
ইতিহাসে ওর নাক
নখ মুখ এঁকে দিলে
প্রাণের গরিমা
মরমে স্পর্শ করে...না
কল্পনায়
ইতিহাসে ওর স্তন
বুক দুধ ধারণ করালে
রসে কোল ভরে...না
কল্পনায়
ইতিহাসে তবু ... থাকবে
না?
যে তমসায়
হারালো, মেঠো রাতে
সুর শানালো,
সে কোত্থাও
থাকে না। সাবাসি
বুকেতে চেপে
মিলিয়ে
যেতে চায় অনন্ত
দ্বিধাহীন
এক্ষণে।
আশনাই
“...actively
loving”- Sylvia Nash
দ্বিধা
গায়ে বেঁধে, জীবন
কার্য কারণ বোঝাতে
বোঝাতে
আরেক
বার বৃষ্টি এসে
গেল। তখন সজীব
মেরামতিগুলো।
তন্নি
চেষ্টার বিলম্ব
থেকে থেকে ক্ষয়ে
গেছে
কখন,
খেয়াল হয়নি। এবারে
যজ্ঞ প্রতীক্ষার;
কখন
খনন শুরু হবে মেঘ?
ঝরবে রক্তবালি
গল্পগুলো
যা বিস্ময়ে
ছানাবড়া করে দেবে
আস্তিনকে। বেওয়ারিশ
থেকে
অংশাবতার
হতে লাগে কয়েক
শতকের যন্ত্রণা
গ্রন্থ,
অথবা,
চোদ্দো বছরের স্মারকলিপি।।
সব
কটি কবিতায় ব্যবহার
করা উদ্ধৃতি নেওয়া
হয়েছে সিলভিয়া
ন্যাশের “এ
বিউটিফুল মাইন্ড” বইটি
থেকে।
===
Copyright
© 2016 Susmita Paul Published 17th July , 2016.