কৌরব
অনলাইন ধারাবাহিক
সংযোজন-১২
এপ্রিল
১৭, ২০১৬
সূচি
কবিতা
তাহিতি
ফরজানা
===
|
তাহিতি
ফারজানা সেই প্রকৃত
২১-১০ দশকের কবি, যাঁদের প্রাথমিক
ও প্রাত্যহিক
লেখালিখি গড়ে
উঠ(ঠে)ছে
সমাজমাধ্যমের
জলজ্যান্ত পাতায়।
তাহিতির জন্ম
সিলেটের মৌলভীবাজার
জেলায়। বর্তমানে
অধ্যয়নরতা বাংলাদেশের
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাহিতির
প্রথম কবিতাগ্রন্থ
আদ্যোপান্ত হৃদয়
যাপন প্রকাশ পেয়েছে
একুশে বইমেলা
২০১৫য়। শারীরিক
বয়সকে ছাপিয়ে, ঈর্ষণীয়ভাবে
পরিণত অতিতরুণী
তাহিতির কবিতা
মুগ্ধতার পাশাপাশি
সম্ভ্রম জাগায়। |
কবিতা
ভাবনাঃ
খেই হারিয়ে ভেসে যাবার পথে আঁকড়ে ধরার মতো মহৎ খড়কুটো থাকে না সর্বদা। শব্দরা হাতুড়ি পেটায় মাথায়। নির্মাণ এতো সহজ নাকি! ভাবছি কি চাই। কংক্রিট সুখ অথবা রাতভর টিনের চালে বৃষ্টির অর্কেস্ট্রা। কি আশ্চর্য, ভাবার আগেই চুক্তি সম্পাদিত হয়ে আছে আমার আর অদৃশ্যের মধ্যে। এপাড়ে জরাক্রান্ত বিষাদ; গাছ পড়ছে, মানুষ পড়ছে অক্সিজেন-কার্বনের অমীমাংসিত লেনদেনে। অনাস্থায় কাঁপছি। প্রচণ্ড কাঁপন তোলা শীতে দৈবভাবেই যেন আগুন জ্বলে উঠে ভেতরে। যে আহার হয়ে বৃহত্তম ক্ষুধা নিবারণের কাজ করে যাচ্ছে, সে তো কবিতাই। অদেখা পৃথিবী জোরালোভাবে আমাকে ধাক্কা দেয় তারই ইশারায়। যাকে পাওয়ার কিছু নেই, হারানোর কিছু নেই তার জন্য মন কেমন করা অনুভূতি সুখের গভীরে যে অবিশ্বাস্য পচন ধরায়, তাও একটা সুখ। ছুটে যাচ্ছি চাকার গতিতে। এক একটা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কখনো পুনর্জন্ম নিচ্ছি, কখনো রুপান্তরিত হচ্ছি অট্টহাসিতে। আমি দেখি, পৃথিবী হোঁচট খায় কোন কোন আত্মার সামনে এসে। গভীর রাতের রাস্তায় একটি গাড়ি উল্টোদিকে ঘোরে। সে কি নর্তকী? সে কি অন্ধ মানুষ? বিহ্বলতা শরীরে হুল ফুটাচ্ছে। সবসমেত আমি হাঁটছি। রাস্তা মেরামত আর সেতু নির্মাণের ভার বন্ধুর হাতে দিয়ে আমি পাড়ি দিচ্ছি অনুভূতিসমগ্র। নিজের ভেতরকে হাতিয়ে নেয়ার যে রণকৌশল আমাকে উস্কে দিচ্ছে ভালোমন্দে সংযত থাকার সে-ই কবিতা। কবিতা বৃক্ষ, যা বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। অন্ধকার মুখগুলোতে আলো জ্বালবার উন্মাদনায় কবিতা জেগে থাকে অষ্টপ্রহর ঈশ্বরের মতন। ক্ষয়ে যেতে যেতে জোড়া লাগা অথবা জোড়া লাগতে লাগতে ক্ষয়ে যাওয়ার যে রোমাঞ্চকর উত্তেজনা সময়কে লুট করে নেয় আয়ু থেকে তা-ই কবিতা। আমার আত্মসমর্পণ।
আগুন
আগুন পোহানোর দৃশ্য, দৃশ্যত আগুন
লেগে থাকে চোখে। পাড় সাক্ষী রেখে
শুরু হয় নদীদের অভ্যন্তরীণ চিঠি চালাচালি।
পত্রবাহকের মতো একটা সফেদ পা
দৈবরথে চড়ে পারি দেয় মনজঙ্গল।
নিয়ে আদিম উষ্ণতা আর ঝলসানো আহার
পৌছে যায় মানুষের কাছে। পুলক জাগায়।
অনান্তরিক দিনে, মুখ দেখাদেখি বন্ধ জনপদে
স্তব্ধতা ভেদ করে উঠে আগুন
শীতসময়ের ওম।
মাথায় হাত রেখে আর্শীবাদ করি- বেঁচে থাকো।
দুঃখ অমৃত
দুঃখ পেলে অসীমের কথা বলব
ফেরার নিশ্চয়তা পেলে সেখানে যেতাম
রঙের মধ্যে কত রঙহীনতা লুকিয়ে আছে
এক এক করে প্রমাণ দিতাম তার সামনে।
দুঃখ পেলে জুতোর ফিতের কথা বলব
পথ মুখস্ত করে নেয় যে কাল্পনিক ভ্রমণেই।
বাদামের খোসার মতো কথা ছিটানো প্রকৃতই ভুল
কথাকে পুণরুদ্ধারের প্রয়োজন হয়।
দুঃখ পেলে মরণ
সমান অপেক্ষার কথা বলব
উচ্চতা না শিখেই মানুষ কেন লালনের ছায়া হতে চায়
সুযোগ পেলেই কেন বিবেকের বদলে ক্ষমতা দেখায়
এসব জিজ্ঞাসার কাছে দুঃখ সামান্যই।
দুঃখ পেলে যেন বা সুতোয় টান পরে
বহুজন্মের স্বরুপ মনে আসে ভরসন্ধ্যায়
আকাঙ্খা অপার আকাশ
কাছে গেলে দূরে সরতে থাকে।
দুঃখ পেলে আরও দুঃখের দিকে হাত পাতব
তার রুপান্তরশক্তিই বলে দেবে
সমগ্র আনন্দ এক হাসিতে ধরে কি না।
আরেকটু ভাবনা
চাকার ঘর্ষণে পিশে যায় মৃদু শব্দাবলী
কত কন্ঠের উন্মত্ত গান লেগে থাকে রাতের গায়!
রঙ ধার করে গায়ে মেখো না অচিন।
পাতারা দুঃখ পেয়ে হলুদ হতে চাইবে প্রহরান্তরে।
স্পর্শকাতর তুমি,
সড়কবাতি নিভিয়ে ঘুমাও।
আলস্য বুঝে নিয়ে পথহীন পথে যে স্বেচ্ছায় ছোটে
সেও কি নিয়তি?
ছায়াবাজি বুক পেতে নেয় ভাঙা দেয়াল
তার মতো হতে পারলাম কই?
শেকড়ে লবণ ছিটিও না অচিন।
ঘরে হুড়মুড় ঢুকে পড়ছে দুঃসহ আলো
সড়কবাতি নিভিয়ে ঘুমাও।
সহজাত
সময়ের আলোকচিত্র দৃঢ় হয়
আমার চোখের ভেতর।
ধারণ করে কিছুটা পাল্টে দিতে চাই তাকে
রঙ সংযোগে যদি হয়ে উঠে হৃদয়গ্রাহী!
স্বেচ্ছায় নির্বাসন দেই
দ্রুত অতিক্রম করে গেলে যা কিছু সুন্দর।
রাত আমাদের কানকে প্রস্তুত করে
সবরকম আর্তনাদ শোনার জন্য।
কেউ দাঁড়িয়ে থাকে, আঙুলের ক্ষত মুছে দেয়
কালো কফির মতো ব্যক্তিত্ব নিয়ে।
আমি বেড়ে উঠি
তোমার চোখের ভেতর।
নামফলক
দেয়াললিখন মুছে দিয়ে
নিজেদের সুরে কথা বলে অতিথি পাখিরা
বৃক্ষের বুকে জমা শীত থেকে রেহাই পেতে
তারা আগুন জ্বালে শূণ্যে।
পাহারী বৃষ্টি, পাহারী কুয়াশায় ভেজার আগে
মৃত্যু হয় যে বঞ্চিত পর্যটকদের
তাদের কবরে প্রোথিত থাকুক ব্যতিক্রম নামফলক।
ছাতিম আর তামাকের টানে পাগলপ্রায় সাধুর
ঘরভীতি দেখে কেউ কি ভাবে
ফুলের মধ্যে কোন মনুষ্যগন্ধ নেই!
অথচ আছে,
নিশ্চিত আছে।
জ্বরকাঠি
জ্বরকাঠি
কতটা জানান দেয় উত্তাপ?
চিনচিনে ব্যথা, গড়ানো জল নিয়ে চোখ
চেয়ে থাকে খোলা দরজার মতো।
ভেতরে চোরাবালি
পা সাজাচ্ছে পথ অতি সাবধানে।
অভিমান বিস্ফোরণে
ফেলে রেখে অহেতুক শরীর
অনেকে চলে যায় সূর্য হতে।
পৃথিবীকে নিজের চারপাশে ঘুরাবে বলে।
দর্পণ
বাতাসে কাঁপছে বাঁশঝাড়
হেঁশেলের ধোঁয়া ঢেকে দিচ্ছে বাড়ি।
ঘুম নিজস্ব সম্পত্তি
কেউ ভাঙতে এলে জরিমানা
অপার্থিব কোন নাম রাখবো না
আহ্লাদিত সকালের।
স্পষ্টত ভাগ হয়ে গেল উঠান
রাজহাঁসের স্নান, উড়ালসূত্র নিয়ে
একদফা বৈঠক হল মানুষে মানুষে।
আমরা সময়ের অকৃতকার্য শিক্ষার্থী
নিজেদের আত্মস্থ করা বাকী, এখনও।
তাকিয়েছি জলে, তার নিচে
প্রতিবিম্ব জাগে বৃক্ষ, দালান এমনকি সুদূর আকাশের।
জল আসলে প্রকৃতির দর্পণ।
জিজ্ঞাসা
আমি কি আরোপিত?
কোন প্রলেপ, খেরোখাতা ছাপিয়ে পিঁপড়ের খুনসুটি।
একা শীতকাল আমি!
স্ববিরোধী, আছি কোথাও?
সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে, থাকুক নিজের প্রতি।
আমি, আমি বিস্তীর্ণ বালিতে নোনা পদক্ষেপ
ঘুমগ্রস্ত সংকেত, জোড়া লাগছি সেলাই মেশিনের অহংকারে।
চালকবিহীন বিমান থেকে ঝুঁকে
আমি কি আত্মহত্যাপ্রবণ?
বর্ণে বর্ণে লুট হয়ে ছলকে উঠি শব্দে
উল্লেখ্য, যেকোনো শব্দকে আমার কবিতা মনে হয়।
ঝিঁঝিঁ
যেন এক মহাদেশ পাড়ি দেয়া
জলের প্রশ্রয়ে পাড়ের দৃশ্য খানিক কাঁপে।
কাগজ পুড়িয়ে রান্না হচ্ছে ভাত
তার দিকে চেয়ে আছে সারি সারি বস্তি।
প্লাটফর্মে শুয়ে থাকা অন্ধকার মুখেরা
ঝিঁ ঝিঁ হয়ে ডেকে উঠে
প্রত্যুত্তরে হুইসেল বাজে।
আমি অজান্তে ভাঙা ল্যাম্পপোষ্ট
কার্যকারিতা হারিয়েছি অমীমাংসিত শব্দের ভেতর
যে শব্দ জমতে জমতে পাহাড় হলে
আরোহণের সাহস করে না কেউ।
সচেতনে আমি গতি, স্মৃতিখোর নেশা
আচমকা স্লিপারের ঘুম ভাঙিয়ে
হেলেদুলে ছুটছি অন্যের গন্তব্যে-
অন্ধকার ঠেলে ঠেলে রাত্রীর রেলগাড়ি।
কামনাগুলো শুভ
মস্তিষ্কে এখন স্মৃতির বদলে অন্ধকার
সেই অন্ধকারকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি দিয়ে
মন্থর পথগুলো এই ঘুমন্তের মুখ চেয়ে
নিজ ক্রোধে ছুটে যাক।
আজন্ম বার্ধক্য আর বরফ চাপা স্বভাবকে
রোদ-ছায়া দিয়ে মানুষ করি
পাথরের তৃষ্ণা থাকা অবস্থায়
সাজাই সুন্দরের অনিবার্য বাসর।
নেশা উঠুক, বসন্ত উঠুক ক্ষয়িষ্ণু পাথর বেয়ে।
===
Copyright
© 2016 Tahiti Farjana Published 17th April, 2016