কৌরব অনলাইন ধারাবাহিক সংযোজন-১

জানুয়ারী ১, ২০১৬

 

সূচি

   

কবিতা

মাসুদ খান

 

 

=== 

 

কবি, লেখক, অনুবাদক। জন্ম ২৯ মে ১৯৫৯, বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলালে। পৈতৃক নিবাস সিরাজগঞ্জ। প্রকৌশলবিদ্যায় স্নাতক, ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর। তড়িৎ ও ইলেকট্রন প্রকৌশলী। বর্তমানে প্রবাসযাপন ক্যানাডায়। লেখালিখি প্রকাশিত হতে শুরু করে মধ্য-আশি থেকে - নদী, অনিন্দ্য, , একবিংশ, প্রান্ত, নিসর্গ, বিপ্রতীক, দ্রষ্টব্য, কিছুধ্বনি, উত্তরাধিকার ইত্যাদি লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্য-পত্রিকায়।পরবর্তীকালে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন সাহিত্য-পত্রিকায় ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও রোমানিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা

 

প্রকাশিত হয়েছে Language for a New Century: Contemporary Poetry from the Middle East, Asia, and Beyond (W. W Norton & Co., New York/London, 2008), Contemporary Literary Horizon Anthology (Romania, 2012), Intercontinental Anthology of Poetry on Universal Peace (Global Fraternity of Poets Publishing, India, 2014) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকলন, ম্যাগাজিন ও ওয়েবজিনে।

 

প্রকাশিত গ্রন্থ:

v  পাখিতীর্থদিনে (নদী, ঢাকা, ১৯৯৩)।

v  নদীকূলে করি বাস (একুশে পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ২০০১)।

v  সরাইখানা ও হারানো মানুষ (একুশে পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ২০০৬)।

v  আঁধারতমা আলোকরূপে তোমায় আমি জানি (ভাষাচিত্র, ঢাকা, ২০১১হাওয়াকল, কলকাতা, ২০১২)।

v  এই ধীর কমলাপ্রবণ সন্ধ্যায় (আড়িয়াল মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশনস, মন্ট্রিয়ল/ঢাকা, ২০১৪)। 

v  Poems of Masud Khan (Antivirus Publications, Liverpool, UK, 2014).

v  দেহ -অতিরিক্ত জ্বর (চৈতন্য প্রকাশন, সিলেট, ২০১৫)

Carnival Time and Other Poems (Bibliotheca Universalis, Bucharest, 2015).

 

 

কৌতুকবিলাস

 

ঈশ্বর ছুড়েছে ঢিল ঈশ্বরীর দিকে, কৌতুকবিলাসে।

 

গ্রহটিকে মাটির ঢেলা বানিয়ে ব্রহ্মাণ্ডের এক প্রান্ত থেকে

ক্ষেপণ করেছে ভগবান, অন্য প্রান্তে থাকা ভগবতীর প্রতি।

 

মহাকাশ জুড়ে প্রসারিত মহাহিম শূন্যতা, লক্ষ-ডিগ্রি নিস্তব্ধতা--

তারই মধ্য দিয়ে একপিণ্ড ছোট্ট শ্যামল কোলাহল হয়ে

ধেয়ে যাচ্ছে এই ঢিল।

 

ঢিল নয়, মহামিসাইল--

মহাকাশের জোনাক-জ্বলা ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে

একের পর এক যমজাঙাল পেরিয়ে মিথ্যা-ইথারে অস্থির

ঢেউ তুলে ছুটছে ঢিল অযথা আহ্লাদে

গোঁয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের মতো একদিকে টাল হয়ে চক্কর খেতে খেতে

ঘোর-লাগা লাটিমঘূর্ণনে

আহ্নিকে বার্ষিকে ধোঁয়াজটিল বেগব্যঞ্জনায়-- 

যে বেগ উদ্ভ্রান্ত, যেই গতি একইসঙ্গে ঋজুরেখ বক্র চক্রাকার

ঘূর্ণ্যমান নাটকীয় একরোখা দুর্ধর্ষ ও ওলটপালট...

 

ছুটতে ছুটতে হয়রান ঢিলখানি।

ওদিকে ঈশ্বরী, ওই রাঘবরহস্যে-ঘেরা উত্তুঙ্গ রহস্যরাজ্ঞী,

সর্বনাশা এক ভাব-আলেয়ার ভাব ধরে অজ্ঞাত স্থানকালাঙ্কে বসে 

থেকে-থেকে ছিনালি-হাতছানি একটু দিয়েই সরে যাচ্ছে দূরে।

 

মুহূর্তে মুহূর্তে ফুলে-ফেঁপে ওঠে মহাকাশ।

বেঁকে-যাওয়া, বাঁকতে-থাকা, ক্রমপ্রসারিত

এক দেশকালের ভেতর দিয়ে ঘটতে থাকে

ঢেলাটির উদ্ভ্রান্ত উন্মাদ ছুটে-চলা। আর

ছিটকে পড়ার ভয়ে ভয়ার্ত শিশুর মতো ঢেলাটির গা আঁকড়ে ধরে

চাম-উকুনের মতো চিমসা দিয়ে পড়ে থাকে প্রাণপণ

তটস্থ ও অসহায় প্রাণিকুল।

 

খেলা করে ভগবান ভগবতী-- বিপদজনক ঢিল-ক্ষেপণের খেলা।

আর রোমাঞ্চে ও ত্রাসে শিউরে-শিউরে কেঁপে ওঠে তাদের শিশুরা।

 

জ্বরের ঋতুতে

 

তখন আমাদের ঋতুবদলের দিন। খোলসত্যাগের কাল। সুস্পষ্ট কোনো সর্বনাশের ভেতর ঢুকে পড়তে চেয়েছিলাম আমরা দুজন। তার আগেই তোমার জ্বর এল। ধস-নামানো জ্বর। তুমি থার্মোমিটারের পারদস্তম্ভ খিমচে ধরে ধরে উঠে যাচ্ছ সরসর করে একশো পাঁচ ছয় সাত আট...ডিগ্রির পর ডিগ্রি পেরিয়ে...সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী তাপের সহগ হয়ে উতরে উঠছ তরতরিয়ে সেইখানে, যেখানে আর কোনো ডিগ্রি নাই, তাপাঙ্ক নাই...তাপের চূড়ান্ত লাস্যমাত্রায় উঠে ঠাস করে ফারেনহাইট ফাটিয়ে বেরিয়ে আসছে থার্মোমিটারের ফুটন্তঘন বহ্নিতরল... 

 

তীব্র, ধস-নামানো জ্বরেও নারীরা ধসে না। হয়তো কিছুটা কদাকার দেখায়...এবং কিছুটা করালীর মতো...যত রূপসী তত করালিনী, জ্বরে...

 

একসময় মাথা-ফেটে-যাওয়া থার্মোমিটারকে ব্রুমস্টিক বানিয়ে তাতে চড়ে উধাও উড়ালে অস্পষ্ট অঘটনের দিকে হারিয়ে যাচ্ছ হে তুমি, প্রিয়তরা পিশাচী আমার।

 

জীবনে প্রথম মুখোমুখি এরকম সরাসরি স্পষ্ট বিপর্যাস

মিটারের জ্বালাখোঁড়ল থেকে ঝরছে তখনো টগবগ-করে-ফোটা ফোঁটা-ফোঁটা লাভানির্যাস।

 

প্রলাপবচন

 

নদ এসে উপগত হবে ফের নদীর ওপর

দুই পারে জমে উঠবে কপট কাদার ঘুটঘুটে কেলেংকারি

মাঝখানে চোরাঘূর্ণি চোরাস্রোত 

এলোমেলো এলোমেলো বাউরি ভাবনা এসে

পাক খেয়ে ঢুকে পড়বে বৃষ থেকে মিথুনের অধিক্ষেত্রে...

 

মাকাল ফলের মৃদু মনস্তাপ

করলা-লতার শ্যামলা আক্ষেপ

কোকিলস্য প্রবঞ্চনা, কাকের বাসায় উপঢৌকন

ভরা বিলের ওপর দিয়ে ভেসে আসা ভেজা-ভেজা সুর

হুদহুদ পাখির অস্থিরতা, অসমাপিকার লঘু তঞ্চকতা

ঘাড়-ত্যাড়া অশ্বের অস্মিতা, উগ্রবসনা আগুনের চঞ্চল রসনা...

আলগোছে সবকিছু পাশ কেটে গিয়ে

ওইদিকে বর থাকবে কনের বশে

খলনায়কের দাঁতের নিচে পড়বে কট্টরপন্থী কাঁকর

চার্জ করা হবে পশ্চিমের ব্লাস্ট ফার্নেসে

আর ঝাপটা এসে লাগবে পূর্বেরটা থেকে

খামাখা দিওয়ানা হবে রঙিলা বিড়ালিনী

ঘনঘন গণ-হাইপ উঠবে মামুলি ঘটনা ঘিরে এমনি-এমনি

হিস্টিরিয়ায় কাঁপতে থাকবে দেশকাল 

সাত সাধু এক হবে, এক শয়তান সাত

দোষযুক্ত আলু নামবে হিমাগারের শ্রোণিচক্র থেকে...

 

এবং হয়তো আমি একদিন ঠিকই

পড়ো-পড়ো ঘরকে যোগাতে পারব

গাঁট-অলা তিন-বাঁকা শালকাঠের সমর্থন

নিশ্চিহ্নকে দেখাতে পারব কিছু লুপ্তপ্রায় চিহ্নের ইশারা

বিশেষকে কোনো ভ্রান্তিকর নির্বিশেষের আভাস

বেদিশাকে দিশার বিভ্রম...

 

আর দুম করে লিখে ফেলব এমন এক কবিতা একদিন,

যা পড়ে ভৌতিক সুর তুলবে একসঙ্গে সাধু ও শয়তান

সাপ-আর-অভিশাপে-গড়া মতানৈক্যে-ভরা গামারিকাঠের গিটারে

আর চলে আয়বলে খোদ খোদাতালা টুইট পাঠাবেন দিব্য টুইটারে।  

 

ফাইন আর্ট

 

তোমার সহিংসতাটুকু আমিই তোমার হয়ে

সেরে আসি বাইরে গিয়ে। তবেই-না তুমি

সম্পূর্ণ অহিংসরূপে দিবানিদ্রা যাও।

 

সন্ধ্যাবেলা জেগে উঠে বলো-- বাহ্! করেছ কী কাণ্ড!

বাইরে কী অপরূপ রক্তবিকিরণ!

স্প্রাং রিদমের তালে-তালে জম্বি ছন্দে চলছে যজ্ঞ মেষমেধ-- 

ওই যে থ্যাঁতলানো দেহ-- প্রতীকপ্রতিম, ছিটকে-পড়া ঘিলু-- রূপকসমান,

পোড়ানো হাত-পা মুখ-মাথা-- উপমেয়হারা উপমান,

কাটা মুণ্ডু, ফাটা জিভ, বিমূর্ত চিত্রের মতো নাড়িভুঁড়ি, অনুপ্রাস,

থকথকে কূটাভাস, চকচকে চিৎকার, সত্রশিখা, উগ্র আগ্নেয় তুফান...

থেকে-থেকে যজ্ঞপটে জেগে ওঠে ভৌতিক জবান।

যোজনগন্ধার গন্ধকাহিনির মতো চমৎকার মেষরক্তের সুবাস

ভেসে আসছে জানালায়।

 

সেইসঙ্গে এও বলো--

জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলো সব আর্ট, তাড়াতাড়ি।

বিমূর্ত চিত্রের রূপ-- মূর্ত তো থাকে না বেশিক্ষণ।

পচে। গলতে থাকে। চণ্ড গন্ধ হয়। জীবাণু ছড়ায়...

 

ডালিম

 

যুগের যুগের বহু বিষণ্ন বিবর্ণ মানুষের দীর্ঘনিঃশ্বাসের সাথে

নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড--

তা-ই থেকে তিলতিল কার্বন কুড়িয়ে

জমাট বাঁধিয়ে, কাষ্ঠীভূত হয়ে

তবে ওই সারি-সারি দিব্যোন্মাদ ডালিমের গাছ।

 

বৃক্ষের যতটা সাধ্য, তারও বাইরে গিয়ে

তবেই-না ওই টানটান বেদানাবৃক্ষ, ব্যাকুল বেদনাকুঞ্জ,

                              মায়াতরু...রূপাঙ্কুর...রূপসনাতন...

পাতার আড়ালে ফাঁকে-ফাঁকে ফলোদয়

থোকা-থোকা গুপ্ত রক্তকুপিত উত্তপ্ত বিস্ফোরণ

রামধনুরঙে, মগ্নছন্দে

ফলিয়ে ফাটিয়ে তোলে ডালে-ডালে লালাভ ডালিম।

 

বসে আছি ম্রিয়মাণ...বেদনাবৃক্ষের নিচে, পড়ন্ত বেলায়।

সামনে খুলে মেলে-রাখা একটি ডালিমফল, তাতে

প্রভূত বেদানা-দানা, নিবিড় বেদনাকোষ...আর,

বেদানার দানারা তো আর কিছু নয়, জানি--

টলটলে করুণ চোখে রক্তজমা চাবুক-চাহনি...

 

ভাবি,

এতসব ডালিমকোষের মধ্যে, ঠিক কোন কোষটি রচিত 

আমারই সে ন্যুব্জ ব্যর্থ বিষণ্ন পিতার বাষ্পঠাসা দীর্ঘশ্বাসের কার্বনে!

ঘনীভূত হয়ে ওই বায়ব অঙ্গার, তিলে-তিলে, অনেক বছর ধরে...

 

মৌসুম

 

গাছগাছালিরা আবার প্রকাশ করবে পত্রপত্রিকা।

কীটাক্ষরে ছাপা হবে তাতে কথা ও কথিকা, কবিতাও...

মহোৎসব লেগে যাবে বানানভুলের, কাটাকুটি,

নিরক্ষর পাতায় পাতায়।

 

আমার লাইন হয়ে যায় আঁকাবাঁকা, ভালো না হাতের লেখা...

গাইতে গাইতে এই তো এখনই ছুটে যাচ্ছে কাঠবিড়ালির শিশুকন্যা।

তার ফোকলা দাঁতের খিলখিল হাসির হিল্লোলে

আগাম চেয়ার উল্টে পড়ে যাচ্ছে ওই 

দ্যাখো সাপ্তাহিক কলাকাণ্ডের ঘোড়েল সম্পাদক।

রসিক পাঁকের মধ্যে খাবি খাচ্ছে সম্পাদনা, মৌসুমি আহ্লাদে।

 

অপরের ভাব ভাষা চুরি করে পাইকারি চালান দিতে গিয়ে

ধরা খেয়ে জব্দ বসে আছে বর্ণচোরা দুই চতুর চড়ুই।

শরমে স্থগিত করে দিচ্ছে পত্রপ্রকাশনা আপাতত

শতশত ধোঁকা-খাওয়া মাটি-ঝোঁকা রাংচিতা-ঝোপ,

আলাভোলা আশশেওড়ার ঝাড়।

 

আর ক-টা দিন পর

উড়াল কটাক্ষ ছুড়তে ছুড়তে গাছ থেকে গাছে

উড়ে যাবে উড়ুক্কু শিয়াল, গিরগিটি বহুরূপী... 

আর প্রকাশিত পত্রপত্রিকা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে বলে

দুড়দাড় গাছে উঠে পড়বে

আরোহসক্ষম বেশ কিছু বন্য বেল্লিক ছাগল।

 

তারা খুদে পত্রগুলি খাবে আগে।

 

ব্লিজার্ড

 

আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে ফিরে

সমগ্র নীলিমা তছনছ করে দিয়ে

কোটি-কোটি দুষ্ট দাপুটে শিশু খেলছে হুলুস্থুল বালিশ ছোড়ার খেলা।

অজস্র কার্পাস ঝরছে

লক্ষকোটি বালিশফাটানো তোলপাড়-করা অফুরন্ত তুলা।

যেন তুলারাশির জবুথবু জাতক হয়ে পড়ে আছে ধীরা ধরিত্রী, বিব্রত বেসামাল।

সাথে উল্টাপাল্টা ঝাড়ি একটানা বেপরোয়া বাবুরাম পাগলা পবনের।

আবার কোত্থেকে এক নির্দন্ত পাগলিনীর আকাশ-চিরে-ফেলা ওলটপালট অট্টহাসি

মুহুর্মুহু অট্টালিকায় প্রতিহত হয়ে ছুটছে দিশাহারা দিগবিদিক

ঘরবাড়ি মিনার-ময়দান বাহন-বিপণী আড়ত-ইমারত গাছপালা বন বন্দর বিমান

সবকিছুর ওপর এলোপাথাড়ি থার্ড ডিগ্রি চালিয়ে বের করে আনছে

তুলকালাম গোপন তথ্য, তুলাজটিল শীৎকার।

 

নলজাতক

 

যদি আমি অর্জন করে থাকি দশপারমিতা, তবে এই নলবনে যত নল আছে সমস্তই গাঁটহীন, একচ্ছিদ্র হোক, যাতে নলের ভেতরে জাতকদের জন্ম, বর্ধন ও বিচরণ হয় অতি অনায়াস। তারপর, একদিন দুপুরে, নুইয়ে ফেলে মোটা-মোটা নলখাগড়া অগণন, নলের ভেতর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসুক সারা গায়ে নালঝোলমাখা কালো-ধলো সরল- ও কোকড়া-চুলো গমরঙা তামাটে কপিশ অগণিত রৌদ্রদিগম্বর ন্যাংটা নলজাতক। ভরে যাক নিস্তরঙ্গ এ-অরণ্য অক্ষৌহিণী দাপুটে দামাল শিশুবাহিনীর উত্তাল তরঙ্গরঙ্গে...

 

দমকল

 

উন্মাদ উঠেছে গাছে, তরতর করে, ছাড়া পেয়ে পাগলাগারদ।

 

নামে না সে কিছুতেই, যতক্ষণ-না ওই বেঁটেখাটো নার্সটি এসে

মিনতি করে না-নামায় তাকে।

 

নার্স আসে দ্রুত, দমকলের মতন।  

কী-কী যেন বলে হাত নেড়ে নেড়ে,

তাতে খুশি হয়ে নেমে আসে উঁচু ডাল থেকে বিমুগ্ধ পাগল--

ঝোলের উল্লাসে যেইভাবে কইমাছ নেমে আসে পাতে

কানকো টেনে টেনে 

ক্রমিক সংখ্যার মতো সহজ স্বাচ্ছন্দ্যে।

 

ঝিলমিল করে বয়ে যায়, সেবিকার বোধে, পাগলের বিকল বিবেক।

 

উন্মাদ আবার ফিরে যাবে আজ উন্মাদ-আশ্রমে

ধর্মগণ্ডিকায় মাথা রেখে নির্বিকার নিয়ে নেবে

তেরোটি ইলেকট্রিক শক

তেরোবার স্বীকারোক্তি,  স্বাস্থ্যযাজকের শান্ত সুধীর নির্দেশে।

 

প্রহ্লাদপুরের জঙ্গল

 

রামশরণ ব্যাধ গিয়েছিল শিকার করতে, প্রহ্লাদপুরের জঙ্গলে। শিকার মিলেছে প্রচুর। শিয়াল, শজারু, শকুন, গোধিকা, গন্ধগোকুল, ফেজান্ট, কাছিম...মেলেনি কেবল কাক আর বক; ওদেরকে তো আগেই ভস্ম করে দিয়েছে তপস্বী। দুপুরের দিকে পশুপাখিগুলিকে কেটেকুটে মাংসের ভাগা দিয়ে বসেছে ব্যাধ, পাকুড় গাছের নিচে। সাতমিশালি মাংস, বিক্রি হচ্ছে খুব। শব হয়ে শুয়ে আছে শিব। কালী লীলা করছে তার বক্ষের ওপর, যেভাবে প্রকৃতি লীলা করে পুরুষের ওপর; জীব, পরমের। বালিতে মেশানো চিনি, নিত্য-র সাথে অনিত্য যেমন। এস পিঁপড়া দলে-দলে, সিরিজে-সিরিজে, বালি রেখে চিনি বেছে খাও

 

ফেরার পথে একটি ঘাসখেকো বাঘের শাবকও সাথে করে এনেছে রামশরণ। জন্মের পরপরই মেষেদের সঙ্গে চলে গিয়েছিল আলাভোলা ব্যাঘ্রশিশু। সে এখন ঘাস খায় বটে, কিন্তু রাগ আছে ঠিকই, ক্ষাত্রতেজ অব্যাহত...ঠাস-ঠাস করে থাপড়ায়, দাবড়ায় বড়-বড় নিরীহ ভেড়াদের।

===

Copyright © 2016 Masud Khan     Published 1st January, 2016.