তদোগেন
গিরতের লেখা
তদোগেন
গিরতে আদতে মঙ্গোলিয়ান।
জন্ম উলান বাটরের
পুবে ওন্দোরহানে।
বাংলা ভাষা
শিখে লেখালিখি
করছেন।
প্রকাশিত কবিতার
বই; তদোগেন গিরতের
কবিতা, গদ্যের
বই; পিনকুশন।
প্রভাব
and then
there are
memories that are
felled
futures
a tea-cup
that never went back to China
নিজের লেখা
থেকেই কোট করা
আর কী। সে লেখা
বাংলা-ইংরেজির
মিশ্রণ, ব্র্যাকেটশহর।
একে তো ইংরেজি
ভাষায় মধ্যে-মাঝে
লেখার জন্য খানিক
সংকোচেই থাকিকোথায়
কখন ইয়োরোপ, আমেরিকার
দালাল হয়ে যাইতাও
ভাগ্যি ভালো এই
জমানায় জনমানসে
সি আই এ-র তেমন রমরমা
নেই। কী করি, এই
জীবনে বাংলায় আর
থাকলাম কদিন! পেটের
দায়ে, সর্ষে পায়ে,
ইদিক-সিদিক। লেখা
বন্ধ হলেই ইংরেজি,
হিন্দি ইত্যাদি
নানা ভাষায় ভাবনা
জড়ো হতে থাকেতাকে
বাংলায় নামাতে
গেলেই শ্রীযুক্ত
বাংলা ভাষা এক
ভারী ভেলভেটের
পর্দা হয়ে রোদ
জল আটকায়, লেখায়
আর কিছুতেই বাতাস
লাগে না-- ফুঁ দিয়ে
যাকে ওড়ানো যায়
না, সে হলো গে অবসাদ,
ভারী খারাপ জিনিসসায়কায়াট্রিস্ট
ডাকো রে, নিয়ম করে
বড়ি গেলো রে। আমি
হলাম জন্মপ্রবাসী
(মাঝে কিছু বছর
বাংলায়)-- বাংলা
ভাষা আমার কাছে
তো আর আহা মরি মরি
নয়-- বেজায় কসরতের
জিনিস, গ্যাপ হলেই
হলোনতুন করে সড়গড়
হতে বিস্তর নেট
প্র্যাক্টিস লাগে।
তখন ডাঙ্গাল-জাঙ্গাল
থেকে ঝড়তি-পড়তি
শব্দ কুড়িয়ে, টবনিবাসী
শ্রীমতী লংকা চারার
সঙ্গে কথা বলিবিরক্তিতে
তার সাদা কুঁড়ি
ধরে, গোটা গোটা
মরিচ ফোটে, ক্যাপসাইসিনে
টম্বুর হয়ে ওঠে
বীজ, চামড়া-- লঙ্কা
আর পাড়তেই হয় না,
দখিন হাওয়া সে
মরকত ফলরাশি ছুঁয়ে
রান্নাঘরে ঢোকে,
সর্ষে-বাটায়, মাংসের
ঝোলে পড়ে তার সবুজ
নিঃশ্বাস। বাচ্চা
বুড়ো সব্বাই হুশ-হাশ
করি।
লোকে বলে প্রভাব
ভালো না। তার ওপরে
আবার বিদেশী প্রভাবগোদের
ওপর তারাবাজি।
তালে তো জানতেই
হয়, কোনটুক দেশ
আর কোনটা বিদেশ?
সরকারবাহাদুর
কাগজের ওপর লাইন
টানে। বলেউহা
বিদেশযেতি গেলে
ভিসা চাইআছে? নাইকাঁচকলা
খাও, আনরাইপ প্লান্টেইন।
বোলপুর শহরের ভেতর
ভিসা লাগে না যদিও
কিন্তু ঠিক কোনখান
থেকে সাতের পল্লী
শেষ হয়ে নতুনপুকুর
শুরু হয় সে তো আর
জানিনেরে ভাই।
কাজে কর্মে, চাল
কিনতে, পোস্টাপিসে
যেতে হয় যদিও, তবু...।
সাতের পল্লী ভারী
বাজে পাড়াঅক্ষয়
গুন্ডা আর প্রচুর
বাঙাল, বেশীর ভাগই
৭১-এ ঢোকাওদের
খাওয়া দাওয়া আলাদা,
ভাষা কেমন যেন
ঘেসো সবুজঅবশ্যি
বাঙাল আমরাও তবে
৪৭-এর আমদানিজাতে
আলাদা। নতুনপুকুরে
বাঘা বাঘা প্রোফেসরদের
বাড়িপলিশড, গম্ভীরতাঁদের
চামড়ার চটি কুকুরেও
মুখে তোলে না, ভারী
ভক্তিকর তোতো,
তাঁদের ভাষা হলো
গে ইস্পাতধূসর,
ঝগড়াঝাঁটিও কেমন
ঠান্ডা। আমি বাপু
দেবেন্দ্রগঞ্জের
ছেলে আমাদের সাধারণ
ভাষা পাঁশুটে।
খুব ভয়ে থাকিলেখায়,
জীবনে সাতের পল্লীর
প্রভাব যেন না
পড়ে কোনোমতে, নতুনপুকুরেরও।
সে বাপু সু কু যাই
হোক, প্রভাব তো
বটেই। ফলে গদ্য,
কবিতা লিখলেই খুব
সচেতন হয়ে দেবেন্দ্রগঞ্জের
কথা লিখি। শুধু
দেবেন্দ্রগঞ্জের
নয়, জনমত অনুসারে
দেবেন্দ্রগঞ্জের
ঠিক কেন্দ্রস্থল
যে শ্যাওড়া গাছ
তার চারপাশের দুশো
মিটার মাত্র নিয়ে।
কে জানে কখন বর্ডার
পেরিয়ে ভিনপাড়ার
ভূত ঘাড়ে চাপে।
চাপলেই তো কেলোদেবেন্দ্রগঞ্জ
আর ভিখারিবাঁধের
বর্ডারে ওই যে
ময়ূরাক্ষী প্রেসসান্ধ্য
ট্যাবলয়েডে ছেপে
দেবেদেবেন্দ্রগঞ্জের
কবিতায় সাতের পল্লীর
অশুভ প্রভাব; সংস্কৃতি
বিপন্ন!। তাতেও
কী হয়, এই দেবেন্দ্রগঞ্জেই
বাস করে কয়েক ঘর
মগেয়াকালো কুষ্ঠি
মানুষ সব, মেয়েদের
মাথায় তেল পড়ে
না। তামা-রঙ চুল।
ছেলেরা রিক্সা
টানে, মেয়েরা বাড়ি
বাড়ি ঠিকে কাজ।
গুড়াকু দিয়ে দাঁত
মাজে, স্ত্রী-পুরুষ,
বাচ্চা-বুড়ো নির্বিশেষে
বিড়ি টানে। রাতে
চুল্লু খায়, বৌ
পেটায়। শুয়োর পোষে।
মাঠঘাট শুয়োয়ের
গুয়ে ছেয়ে যায়।
ওদের জন্য বাড়িতে
বাড়িতে আলাদা চায়ের
গেলাস। শুয়োর খায়
যে। শুয়োর, সে আমার
মাও এককালে খেয়েছে
তবে সে নাকি এয়ারহোস্টেস-দের
যত্ন করে বেড়ে
দেয়া হ্যাম। বাছ-বিচার
নিয়ে প্রশ্ন করতে
উত্তর পাইও হল
সাদা শুয়োর, খেতে
বাধা নেই। মগেয়াদের
শুয়োরগুলো কালো-কুচ্ছিত,
ঝাঁটার মত খাড়া
লোমঅসভ্যরাই একমাত্র
ও সব কুখাদ্য খায়।
তার ওপরে আবার
মগেয়াদের ভাষাদেহাতি,
বাংলা মিলিয়ে এক
জগাখিচুড়ি বেগনি।
অপসংস্কৃতি। অবশ্যপরিহার্য্য।
তাও তো দেবেন্দ্রগঞ্জ
সরল, শান্তিনিকেতনের
কথা ভাবলে তো ভির্মি
আসেঅনেক ঘর চীনাতারা
প্লাস্টিকের ঝুড়ি
নিয়ে বাজারে যায়,
ওলকপি কেনে, ধনে
পাতাএকদিন চ্যাং
খেতে ডেকেছিলসংস্কৃতি
হারানোর ভয়ে যখন
খাবি খাচ্ছি--চ্যাং-এর
মা থালায় এনে দেয়
মটর ডাল, ভাত, উচ্ছে
ভাজা। বেশ কয়েক
ঘর জাপানিহুই
যে নিপ্পন ভবন!
জার্মান, আমেরিকান,
বৃটিশ, ওলন্দাজ,
ফরাসী, এমন কী বিড়িখোর
ক্যাথলীনডিগডিগে
লম্বা, চৌকো চোয়ালসে
না-কি জার নিকোলাসের
উত্তরাধিকারী।
তো, এই লিখতে
লিখতে কন্টেন্ট
ফুরায়, কদিন আর
গাঙ্গুলিবাড়ি
বনাম ব্যানার্জিবাড়ির
কলতলে কাজিয়া টানা
যায়! উপেনমাতালের
মাঝরাতের দরগলিত
আক্ষেপ! ঝুম আর
হাতকাটা টিংকুর
শ্রেণিবিরোধী
আশনাই! পাপ্পুর
কচি বয়সে পাকা
চুল, বিড়ালাক্ষী
চৈতালীর দর্দ-এ-দিল!
যে কুকুরগুলো রাত
বিরেতে ঘুম নাড়িয়ে
দেয়, তাদের মধ্যে
কটা এ পাড়ার? পন্ডিত
বন্ধু বলেন, ইতিহাস
চাইবৌদ্ধ নিয়ে
ভাবো তো!-- বিষম খেয়ে
বলিসে তো মগধে,
তিব্বতে, সিংহলে
আর কী জানি কোথায়
কোথায়এ দেবেন্দ্রগঞ্জে
বৌদ্ধ পাই কনে!এলাকায়
তো সাকুল্যে একখানি
নকল রামকৃষ্ণ মঠঅরহড়
চাষ করে, কীর্তন
গায়, পালা পার্বণে
পুতুল নল পুতুল
দময়ন্তীকে একলা
ফেলে রেখে অরণ্যে
যায়কলি তার সর্বঅঙ্গে
বিষের কুহর
। রাখালদাসের
কথা মনে পড়ে, বাগান
খুঁড়ি, একখানা
ইঁটও ওঠে না, খোলাম
কুচি কিছু, শেকড়-বাকড়,
একপিস বিভ্রান্ত
কেঁচো। কেঁচো নিয়েই
একদিস্তা নামাই।
পরে খেয়াল হয়, লাইব্রেরি
গেলেই তো হয়। সাধারণ
পাঠাগারসেও আবার
সাতের পল্লীতে।
র্যাকের আড়ালে
লুকিয়ে খুঁজি দেবেন্দ্রগঞ্জের
ইতিহাস। লাইব্রেরিয়ান
বলেকী খুঁজছো
খোকা? মোরাভিয়া?
জেমস হেডলি চেজ?
আরব্যরজনী? অ্যাডাল্ট
বই এদিকে। ভরসা
করে বলেই ফেলিতিনি
বলেনইতিহাসের
বই সব বিজয়ীদের
লেখাবিজিতের ইতিহাস
নেইএই দেখ বিজিত
কুমার দে এত পয়সা
করলেন ওনারও ইতিহাস
নেইযত ইতিহাস
সব শচী মিত্রর,
হাইকোর্টে মোকদ্দমায়
জিতলেন তো। তার
চে ইতিহাস খোঁজো
হিসেবের খাতায়,
সেই একমাত্র অবজেক্টিভআপাতত
জেমস বন্ডের বাংলা
অনুবাদ নিয়ে যাও,
চোখ টেপেন, সব আছে।
ঘরে ফিরে আলমারি,
তোরঙ্গ থেকে ডাঁই
করে হিসেবের খাতা
নামাইলাল শালু
মোড়া, গুনসুচে
সেলাই। কাকু, পিতামহ,
প্রপিতামহ, প্রপ্র,
বৃদ্ধ সব। বর্তমান
থেকে শুরু করি,
টাকা থেকে পেছোই
পয়সায়, আনা, গন্ডা,
কড়া, পণ
মাথার
ভেতর সারা দেবেন্দ্রগঞ্জ
ঝনঝন করতে থাকে
। হঠাৎ হিমেল হাওয়ায়
সম্বিৎ ফেরে, এই
চোত মাসে হিমেল
হাওয়া!জানলার
দিকে যেতে গিয়ে
আয়নায় মুখ পড়েএত
কাঁচা-পাকা দাড়িকে
এ? এই তো বারো বছরের
ছেলে কবিতা লিখছিলামবইয়ের
মলাট থেকে জেমস
বন্ড বলেখোকা
টের পাও নাইবিশ্বায়ন
এসে গেছে, অন্তত
তোমাদের এখানেচাও
বা না চাওমাল্টিন্যাশনাল।
এখন দেবেন্দ্রগঞ্জই
বা কী আর সাতের
পল্লীই বা কীসবই
হলিউড। চোত মাসে
ঠান্ডা হাওয়ায়
কাঁপছিলে না? এই
হাওয়া অস্ট্রেলিয়া
থেকে আসছেসেখেনে
এখন শীত তো!
Copyright ©
2020 Tadogen Girte Published 1st Sep,
2020.