আমাদের
কথা
একুশ
শতকের আগে ‘পোয়েটিক্স’
শব্দটা নিয়ে কি
আদৌ কোনো ভাবনাচিন্তা
ছিল? বাংলা কবিতায়
কবি ও কবিতার ছড়াছড়ি,
বিদেশী ধারণা,
পরিভাষায় সর্বত্র
ঠাসা। কিন্তু
‘পোয়েটিক্স’? একজন
কবির ‘কবিতাধারণা’?
‘কবিতাতত্ত্ব’?
আমাদের পোয়েটিক্স
আসলে আমাদেরই মত
আটপৌরে। যেমন,
আমাদের কবিতারা
- এত গয়নাগাটি সত্ত্বেও
ভারী, জবুথবু এমনকি
বেমানানের সামনেও
বেমানান। অথচ আমাদের
কবিতাভাবনা নিয়ে
কথাবার্তাগুলো
উজ্বল হতে চায়
লোডশেডিং - এ ব্যাটারি
-পাওয়ার্ড ল্যাম্পশপের
মত। এরকম এক ল্যাম্পশপ
১৪ বছর আগে আমি
৭৪০ নম্বর বাসে
ফিরতে ফিরতে দেখেছিলাম।
বরফে ছেয়েছিল চারদিক।
পাইনজংগল লাগোয়া
লাল, তুঁতে এনামেল
বাড়িগুলো ঝিমিয়ে
পড়েছিল। বাচ্চাদের
প্লাস্টিকের স্লেজগুলোও
আর দেখা যাচ্ছিল
না। একা এক ল্যাম্পশপ
স্বার্থপর, কোনোদিকে
আলো না ছিটিয়ে,
নিজেতে সম্পৃক্ত
দাঁড়িয়ে ছিল। আমি
নিজের পোয়েটিক্স
ঠিক ওরকম দেখতে
চেয়েছিলাম- আইসোলেটেড
সিস্টেম- অন্তত
যতক্ষণ কাচের দরজায়
কার্ডবোর্ড লাল
নোটিশ ঘুরিয়ে
'ওপেন' না করছি।
ওপেন, কথাটা আমার
বেশ সংকটজনক লাগে।
কতবার গ্লোসাইনে
ওপেন লেখা দেখে
অন্ধকারে তলিয়ে
গেছি, ঠিক যেমন
কবিতারা মানুষের
চোখ দিয়ে ঢুকে
যায় এক অন্ধকার
কুঠুরিতে, তারপর
স্যাঁতস্যাঁতে
ঠান্ডায় তাদের
আঙুল কুঁকড়ে যায়,
কানের ভেতর মোম
ঢেলে সিল করে দেয়
কেউ, আর জিভ শুকিয়ে
কালো হয়ে যায়-কবিতার
এরকম পরিণতি আমি
তো অন্তত ভাবতে
পারি না- তাই আবার
লিখি, অন্য একটা
কিছু- ভাবি সে কোনদিন
আখরোট কাঠের ব্যালকনি
থেকে দেখতে পারবে
- বাচ্চারা ঝাঁপিয়ে
পড়ছে বরফে, তাদের
ফ্লুরোসেন্ট জ্যাকেট,
মোটা টার্কিশ কাবাবের
গন্ধে তেলচিটে
হয়ে উঠছে দরজার
হাতল। যা কিছু
জীবন্ত তার মুখে
মৃত মানুষজনের
মুখোস পরিয়ে পরিচিত
করে তোলার চেষ্টাই
তো শুধু কবিতা
নয় - কবিতা তো পরিচিত
ভাষায় ক্রমাগত
দেখতে দেখতেও নিজেকে
কিছুতেই না চিনতে
পারাও।
সব্যসাচী,
লকনো
গ্রীষ্ম,
২০২০