তুষ্টি
ভট্টাচার্যের
কবিতা
তুষ্টি
ভট্টাচার্য শ্রীরামপুর
কলেজ থেকে স্নাতক।
দেরি করে লিখতে
এসে এ পর্যন্ত
তিনটি কবিতার বই,
ভিজে যাওয়া গাছ,
ব্ল্যাক ফরেস্ট
ও এরিসেডের আয়না।
গদ্যেও সমান চলাচল।
‘কাঠের প্যাঁচা’
এক বহুপর্ব কবিতা
যেখানে রূপকের
লুকোচুরি ও ধরাছোঁয়া
কুয়াশাকে ঘনীভূত
করে।
কাঠের
প্যাঁচা
১৬
জনসমাগমে
মুখর হয়েছে ওই
প্রাঙ্গণ
আলোকিত
ছায়াদের দেশ
লুকিয়ে
পড়েছে তারা বইয়ের
ভেতরে
কোটরে
জেগে উঠেছে রক্তমাংসর
প্যাঁচাটি
জেগে
উঠেছে পূর্ণ চাঁদের
স্থির আলো
ছায়াহীন
কাঠপ্যাঁচাটি
ধ্যানে
থৈথৈ
মৌনতায় চাপা পড়েছে
ঘর
বন্ধ
দরজার ওপারে সেই
মুখরিত প্রাঙ্গণ
মজলিস
বসেছে আলোপোকাদের
বাস্তুচ্যুত
কিছু সাপ এখানেই
জোনাকির মায়ায়
জড়াতে এসেছে
আমাদের
নির্ঘুম রাত, আমাদের
মৌনতা
ছলছল
করে উঠে হঠাতই
যেন নিভে যায়
এও কি
জোনাকি ভ্রম? জলজ
কাঙ্ক্ষা?
পলক
পড়ল বুঝি কাঠপ্যাঁচাটির
আমারই
চোখের ভেতরে আঁচড়
কেটে বলে গেল-
‘তোমারই সন্তাপ
আজ ছায়ার
কাহিনি বলে দেবে’।
১৭
আমি
কি শোকার্ত ভূমির
দিকে চলে যাব তবে?
চলে
যাব ওই কুয়োর পাড়ে?
ওই যে
দিঘির টলটলে অশ্রু—যাব?
যেতে পারি!
দ্বিধার
কাছে নতমস্তকে
দাঁড়িয়ে থাকে কাঠপ্যাঁচাটি,
কোটরে
অবিরাম ঝড়, বাস্তু
হারিয়েছে মাটি।
এই সময়ে
এসে কোথায় যেতে
হয়, জানে কাঠপ্যাঁচা।
উড়ে
গেছে তার কাঠের
ডানার ভ্রম
পালকে
পালকে বেজে উঠেছে
স্বচ্ছতা
যাকে
তুমি সত্যসুন্দর
বলে ডাক,
যাকে
আমি নিষ্ঠুর ভেবে
তাড়াই।
মিথ্যা
ও মিথের থেকে আজ বেশিদূর
বিস্তৃত
কাঠপ্যাঁচাটির
ডানা
ছায়ায়
আশ্রয় নিয়েছে তার
এই ভূমি।
জলেরও
ছায়া পড়েছে এখানে
কান্নার
দাগ মুছে দিতে
এসেছে একশো ভাস্কর
খোদাই
চিহ্ন বুকে নিয়ে
আমি জেগে আছি অবিচল।
১৮
কাঠের প্যাঁচাটি
অতিতৎপর
ডানা খুলে রেখেছে
আকাশে
শেকড়ের ইতিহাস
জানা এক কোটর থেকে
বেরিয়ে এসেছে।
বৃক্ষ সে প্রাচীন
অতি
মৃদু মৃদু হেসে
দেখছে সেও কলহপ্রবণতা।
বারো ভুঁইয়ার
সংখ্যাধিক্য ও
কোলাহল।
আর বিচ্ছিন্ন
শেকড় থেকে
হারিয়ে গেছে
যারা-
কাঠপ্যাঁচাটি
এই সাময়িক সন্ধিক্ষণেই
রসদ পেয়েছে
তারও আছে চাঞ্চল্যের
ইতিহাস!
বৃক্ষ অনুমান
করে অভিজ্ঞতার
জ্ঞানে।
আমি বৃক্ষের
মতো নির্লিপ্তি
পেতে চেয়ে
নিজেকে ছিন্নভিন্ন
করি রোজ!
ঠাঠা করে হেসে
ওঠে কাঠের চঞ্চু।
১৯
জলের
দিকে চলে যেতে
চেয়েছিল সে
শুকনো
ডানায় মাছরাঙা
ছাপ নিয়ে ডুবতে
চেয়েছিল সে-
ক্ষুধা
ও তৃষ্ণার মধ্যবর্তী
স্তরে থাকতে চেয়ে
তারই
জঠরে আজ
ক্ষুধামান্দ্য,
অম্লশূল
কণ্ঠনালী
নিরেট হয়েছে।
এই
কি সেই শূন্যতা,
এই কি সেই তূরীয়
ভাব
আয়ত্ত্ব
করেছে সে অনায়াসে?
আমি
এক ঘুমের ব্যাপারী,
রাত কাটে সিক্কার
লোভে
সেও
জেনে গেছে এই উন্মাদের
ছল
জেনেছে
ভিতর ও বাহির
গহিনে
যেতে গিয়ে আটকেছে
তার কাঠের অবয়ব।
দরজার
আড়ালে কার যেন
ছায়া লুকিয়ে পড়েছে
আজ
কার
যেন ঘুম কেড়ে নিয়েছে
কে…
এও এক
স্মৃতিবিভ্রম,
এও এক ছন্নমতি
তরাসে
তরাসে আজ কেঁপে
ওঠে জ্বরের তড়কা।
২০
অঘোরী
বাবাকে দেখা গেছে
আজ গাছের
নিচে বিশ্রামরত
বিরক্ত
কর না ওকে—বলে
গেছে কাঠপ্যাঁচা
আরক্ত
মুখ নিয়ে আমি দূর
থেকে দেখি তাঁর
স্থিতি
ঘোরের
বদলে এই কি তবে
পেতে চেয়েছি?
মহাঘোর
এসে বসে পাশে তখনই।
প্রশ্ন
করে কাঠের প্যাঁচাকে-
বল তবে—পক্ষীর
চঞ্চু কী কাজে
লাগে?
খাদ্যাভ্যাস?
শিকারকে ছিন্ন
করা শুধু?
নাকি
সুরের বিক্ষেপ
ঢেলে দেয় ভ্রমের
আভাসে?
কাঠের
প্যাঁচাটি চুপ!
আমিও
এক দিব্যোন্মাদ
সেজে বলে ফেলি-
ঘোর
আর অমানিশা, দুই
বিপরীত মেরুর বাসিন্দা
নিত্যযাত্রী
আমি, ছুটে চলি এ
মেরু, ওমেরু,
ক্লান্ত
হয়ে জিরিয়ে নিই
মধ্যবর্তী কুশাসনে।
অঘোরী
উঠে বসেছেন!
শশব্যস্ত
বৃক্ষটি কাঠপ্যাঁচাকে
ডেকে নেয়
উড়ে
যেতে যেতে সে বলে
যায়, ‘নিয়তির দিকে
পিছন ফিরে বস’।
Copyright ©
2020 Tushti Bhattacharya Published 1st Apr, 2020.