জয়শীলা
গুহবাগচীর কবিতা
জয়শীলা গুহ বাগচীর জন্ম
১৯৭৬য়ে। ওঁর অনেক
কবিতা কৌরব পত্রিকা
ও কৌরব অনলাইনে
প্রকাশিত। তরুণতর বাঙালী
কবিদের প্রজন্মে
জয়শীলার কন্ঠস্বর
সহজেই অগ্রগণ্য,
অসামান্য এক সারির।
ওঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ
‘দেবদারু অপেরা’
(২০১৩) বহু আলোচিত
ও সমাদৃত। দ্বিতীয়
বই ‘থার্মোকট’ (২০১৫)।
দুটি বইয়েরই প্রকাশক
এখন বাংলা
কবিতার কাগজ।
কৌরব প্রকাশনী
থেকে ‘ফুল্লরার
কলের গান’ (২০১৮)।
ব্যক্তির সাথে
সমাজের যে সেতু
সেখানে জয়শীলার
যাতায়াত স্বচ্ছন্দ,
ও বুদ্ধিদীপ্ত
সরস।
দিনলিপি
২৩.০১.২০
গলা
পর্যন্ত উঠে আসছে
টাইপরাইটার । আমি
ঘুমোচ্ছি না বলে
নিঃশব্দ কালি আমাকে
লিখছে। আমি আর
ঘুমবো না বলে ঘুম
আমাকে লিখছে। হেঁটে
যাবার নাম বিকেল।
শুয়ে থাকার নাম
অসমাপ্ত। আমার
হেঁটে যাওয়া, শুয়ে
থাকা সবকিছু টাইপের
অক্ষর… ।
অসমাপ্ত বিকেল
থেকে তুমি আমাকে
রক্ত শেখালে… মাধ্যাকর্ষণ
শেখালে… আর
আমি জরায়ুকে হাঁটতে
বললাম। এইসব মৃদুমন্দ
লেখালেখিকে আস্ত
টাইপরাইটারের
মতো দেখায়। পোশাকসহ
আমাকে দেখায় দলিলের
মতো। নিতান্ত ছা-পোষা
দলিলে উবু হয়ে
বসে আছে কুয়াশার
ফুল।
১.০২.২০
ভেবেছিলাম
ভাত দিয়ে মাখা
হয়েছে কবিতা। অতএব
কবিতার ঘ্রাণে
কোন পদ্মপুকুর
নেই। কিন্তু ভাতমাখা
কবিতায় যেসব গল্পগুজব
থাকে কখন যেন ভরকেন্দ্র
সরিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে
জোনাকির আলোয়।
কবিতাই ঘুড়িতে
প্রদীপ রেখে আসে।
নিমগ্ন জলে দিনের
স্বচ্ছতা দেখায়
জীবনের তলদেশ অবধি।
টুপ করে গল্প ডুবে
যায়। সামান্য নিঃশ্বাস
ওঠে কবিতার। মাছ
খেলা করে আবেগের
শুদ্ধতমে। জিন
উড়য়ে হ্রেষা উড়িয়ে
কবিতায় জ্বলে ওঠে
ক্ষুরধার নীল।
ঘন হয় ভোরের আমলকী।
০২.০২.২০
একটা
রবিবারের ভেতর
বসে আছি। সে আমার
শান্তিলতা বুনে
বুনে লম্বা একটা
ছাদ বানায়। এই
ছাদে কোন রাষ্ট্র
নেই, বেশকিছু নৌকো
উড়ে আসে রোজ । উর্দি
খুলে আজকাল পেয়াদারাও
ঘুরে ফিরে যায়।
কখনো পিচ করে থুথু
মাখা আকাশ ফেলে।এইটুকুই
... । কিন্তু আমি আমাকে
দিয়ে নিজের পা
বাঁধি , হাত মুচড়ে
দিই, গলায় রাখি
প্রকাশিতব্য কূট।
চোখের ভেতর নামাতে
হয় মাছ ধরার জাল।
জালে উঠে আসে ছবির
অক্ষর। এইসব ঘটে
রবিবারে। আর রবিবার
ছাদে বসে আনমনে
দেখে , নিজের মনেই
নৌকো ওড়ায়, নিজেকে
উড়িয়ে দেয় ডিসটোপিক
ফ্রেমে।
০৫.০২.২০
শেষপর্যন্ত
একটিই গাছের কাছে
যাওয়াই ঠিক হল।
শেকড়ে শেকড়ে যে
যাপন আলো জ্বালে...
হিমাঙ্কের নীচে
রাখা সন্ততি... সবকিছু
বড্ড অকারণ মনে
হয়। না রোদ, না বৃষ্টি,
না সুগন্ধি কুয়াশা
কাউকেই তেমন নিজের
মনে হচ্ছে না।
একটা পাখিও যৎসামান্যের
ভেতর বয়ে যাচ্ছে
প্রতিদিন। তবু
ঐ পাতাঝরা ধূলো
কুড়িয়ে ছদ্ম আমিদের
সাজিয়ে তুলছি।
আর একটা একটা করে
ফেটে যাচ্ছে চোখের
স্বচ্ছ। তাতে কিছুই
থেমে থাকে না।
ছা-পোষা বিনুনী,
শামুকের ক্রিয়াপদ,
পাজামার স্যাটায়ার
সব চলে হামা দিয়ে।
একটিই গাছ বোধশূন্য
আলো জ্বেলে সময়
ভুলে যায়, তুলনা
ভুলে যায়। নামের
আগে মৃত স্মৃতি
লিখে রাখে।
Copyright ©
2020 Joyshila
Guha Bagchi Published
1st Apr, 2020.