কবিতা
শৌভ
চট্টোপাধ্যায়
===
নিঃশব্দে
অতিক্রম করি
১
ল্যুডহ্বিগ
হ্বিটগেনস্টাইনের
প্রতি
একদিন
তাঁর সঙ্গে
দেখা হ’তে,
তিনি
বলেছিলেন,
যা-কিছু বলার
নয়
তাকে যেন
নিঃশব্দে
অতিক্রম করি
সে-কথা
শুনেও,
পরাঙ্মুখ আমি,
কতবার—
সন্তানের
কথা ভেবে—
জরায়ুর
কালো ফাঁকা
গর্তের ভেতরে
নেমে
গেছি, কতভাবে
দেখেছি,
অন্ধকারে
পাতা নড়ে
গাছের
শিকড় বেয়ে উঠে
আসে জল
বস্তু ও
চিহ্নগুলি
ভেঙে ভেঙে
যতদূর
যাওয়া
যায়, তার নিচে
অবিভাজ্য
ধারণার মত
রয়েছে
ছুটির দিন,
দুপুরের
মাংস-ভাত
মুনিয়া ও
রুবাইয়ের টান।
ভেবে
দ্যাখো,
অন্ধকার
আছে বলে আলোকে
চিনেছি
হয়ত
জ্যোৎস্নায়
কাক ডেকে ওঠে,
তবু
রাতের
আকাশ দেখে
বুঝতে পেরেছি
সমস্তকিছুরই
একটা শুরু
আছে, সূত্রপাত
আছে
এবং
শুরুর মধ্যে
আকস্মিক
প্রতারণা
ছাড়া
কিছু নেই
ভাষা
নেই। হঠাৎ
বৃষ্টির ফলে
আদালত-চত্বরও
ফাঁকা হয়ে
আসে, ভিজে যায়
জরুরি
কাগজপত্র,
ওকালতনামা
তাদের
চতুর
ভাষাব্যবহারযোগ্য
কিন্তু অসহায়
গাছের
তলায় ব’সে
একা-একা ভেজে
কুকুরটি
কোত্থেকে
ছুটে এসে,
একলাফে
বারান্দায়
উঠে পড়ে।
গা-হাত-পা
ঝেড়ে
কুণ্ডলী
পাকিয়ে শোয়।
এভাবেই
নিম্ন-আদালতে
অসময়ে
সন্ধ্যা নেমে
এল, আজ
সন্ধ্যা
হতেই ফের মনে
পড়ল, অন্ধকার
বাড়ি
দোতলায়
হারিকেন
জ্বেলে, বুঝে
নিচ্ছি জ্যামিতি
ও
গণিতের
বিমূর্ত
সুষমা। আমার
কথা যে তুমি
বুঝতে পার
এমনকী,
বৃক্ষের কথা
শুনে তোমার
চোখেও
নরম সবুজ
পাতা ফুটে ওঠে
এ-ও কি
আশ্চর্য নয়?
কীভাবে সম্ভব
হ’ল
এইভাবে
বোঝা, কীভাবে
আয়নার কাচে
ফুটে উঠল
অবিকল এ-ঘরের
ছবি?
আয়নার
রহস্য আমি
বুঝতে পারিনি
দেখেছি,
আয়নার সামনে
আরেকটি আয়না
রাখলে
ভেঙে যায়
তোমাদের খেলা
কে যেন
চিৎকার ক’রে
বলে ওঠে
অসংখ্য
ছায়ার মধ্যে,
তুমিও
সম্ভাব্য এক
ছায়ামাত্র।
তোমাদের ভাষা
অন্ধ
ভিখিরির চোখে
অনিশ্চিত
গ্রহণের আলো
হয়ত
এভাবে কাটবে
কিছুদিন, আরো
বহুদিন
কেটে যাবে।
অস্পষ্ট
বাক্যের ভারে
তুমি আরো
ক্লান্ত হবে,
বর্ষীয়সী হবে
দেখবে
রাস্তাগুলো,
অন্ধকার হ’লে,
কীভাবে
বদলে যায়,
কিছুক্ষণ
পরপর
বদলে যায়
শব্দের মানে
এ-লেখাও
স্থির নয়, আরো
নানা
বিকল্পের
দিকে
গিয়েও সে
ফিরে আসে,
ভাষার আড়াল
থেকে
প্রতিদিন
খুঁজে দেখে
আড়ালের ভাষা
উত্তরের
বারান্দায়
হাওয়া দেয়,
অল্প শীত
ব্যবধান
ছোট হয়ে আসে
২
একটি
কান্নার শব্দ
চলে গেল
বাড়ির
পেছন দিয়ে, বড়
রাস্তা দিয়ে
চোখের
আড়াল দিয়ে চলে
গেল, দূরে
সেই থেকে,
হাওয়া খুব
ভারি হয়ে আছে
সেই থেকে
বুকে চাপ,
শ্বাসকষ্ট—
কতদিন
তোমাকে দেখি
না!
শস্যহীন
পোড়ামাঠে
জ্যোৎস্নার
ক্ষুর
প্রতিরাত্রে
নেমে আসে, ওড়ে
ছাই
ভোর হ’তে—
রাগ
নয়—অন্ধ এক
অভিমান, টের
পাই
ক্রমশ
ছড়িয়ে
পড়ছে—ধীরে
ধীরে—
অর্বাচীন
আলোর ভেতরে
৩
পাতার
আড়াল থেকে
ঝ’রে পড়ল
কবেকার ফুল—
কবে তুমি
দিয়েছিলে,
মনেও পড়ে না!
ভাবি,
সেসব
গল্পের কাছে
ফিরে যাব,
আরেকবার,
যেসব
গল্পের একটা
নদী আছে,
উপত্যকা আছে
যে-গল্প দিল্লির
শীতে,
কোনোদিন, কাতর
হবে না
অথচ, এমন
গল্পে তুমি
নেই, অন্য কেউ
তোমারই
পোষাক প’রে
হেঁটে যায়,
কথা বলে,
জানতে
চায় আমাদের
গতিবিধি, ভাষা
ক্লান্ত
শব্দের ঠোঁটে
হাত রেখে
আমাদের
মনোযোগ
দাবি ক’রে
থাকে
৪
সেভাবে
নতুন নয় তোমার
তাকানো,
অসামান্য
কিছু নয়। যদিও
গাছের
ফুলগুলি
নতুন, আর
পাতাগুলি
নতুনের
মত, আলোয় ঝকঝক
করছে
নরম
পিচের রাস্তা,
সে-ও কি নতুন,
সে কি
এখানেই
ছিল? দু-এক
মুহূর্ত থেমে,
নিচু হয়ে,
রুমালে
চশমার কাচ
মুছে নাও, ভাব’—
এবার
পাল্টাতে হবে—
এইভাবে,
ক্রমশ তোমার
দেখা
আরেকটু
নতুন হয়,
অভাবিত হয়
৫
সরলতা,
ক্রমশ
জটিলভাবে
ছড়িয়ে পড়েছে...
আলোকিত
বারান্দায়,
অন্ধকার কোণে
সে রয়েছে,
মাটি ছুঁয়ে।
পাতার ডগায়
কখনও
রোদ্দুর পড়লে,
মনে হয়
সবুজ
উদ্যত ফণা—
নিঃশব্দে,
ঘাতক এসেছে!
৬
অরূপ
ডেকেছে। তবু,
এ-বছরও
যাইনি পাহাড়ে!
কোথাও
যাইনি। ঘরে
ব’সে ব’সে,
দেখেছি সে’সব
যা-কিছু পাহাড়
নয়, পাহাড়ের
মত নয়।
অন্য জিনিশ,
অন্য
জিনিশের
মত,
চারিদিক
আলো ক’রে আছে
এইভাবে,
ধীরে ধীরে
পাহাড়ের
নিকটে এসেছি
অন্ধকার ঘরে ব’সে—ভেবেছি অসীম
===